আমি নূহকে তার জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম (এই নির্দেশ দিয়ে) যে, তুমি তোমার জাতিকে সতর্ক কর তাদের কাছে মর্মান্তিক ‘আযাব আসার পূর্বে।
সে বলেছিল, ‘‘হে আমার জাতির লোকেরা! আমি তোমাদের জন্য এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী,
এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদাত কর, তাঁকেই ভয় কর, আর আমার কথা মান্য কর।
তাহলে তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন। আল্লাহ কর্তৃক নিদিষ্ট সময় যখন আসবে তখন আর তা বিলম্বিত হবে না। তোমরা যদি জানতে!’
সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার জাতিকে রাত-দিন ডেকেছি,
কিন্তু আমার ডাক কেবল তাদের পলায়নী মনোবৃত্তিকেই বাড়িয়ে দিয়েছে,
আমি যখনই তাদেরকে ডাকি যেন তুমি তাদেরকে ক্ষমা করে দাও, তখনই তারা তাদের কানে আঙ্গুল ডুকিয়ে দিয়েছে, কাপড়ে মুখ ঢেকে নিয়েছে, জিদ করেছে আর খুব বেশি অহঙ্কার করেছে।
অতঃপর তাদেরকে আমি উচ্চৈঃস্বরে ডেকেছি,
এর পর আমি প্রকাশ্যভাবেও তাদের কাছে প্রচার করেছি, আর গোপনে গোপনেও তাদেরকে বুঝিয়েছি।
আমি বলেছি- ‘তোমরা তোমাদের রব্বের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল।
(তোমরা তা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন,
তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।
‘তোমাদের হল কী যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করছ?
অথচ তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন নানান স্তর অতিক্রম করিয়ে।
তোমরা কি দেখ না, কীভাবে আল্লাহ সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন একের উপরে আরেকটিকে (স্থাপন করে)?
আর তাদের মাঝে চাঁদকে বানিয়েছেন আলো এবং সূর্যকে করেছেন প্রদীপ।
আল্লাহ তোমাদেরকে মাটি থেকে উদগত করেন (এবং ক্রমশঃ বাড়িয়ে তোলেন যেমন বাড়িয়ে তোলেন বৃক্ষকে)
অতঃপর এই মাটিতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনবেন এবং তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন।
আল্লাহ তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন সম্প্রসারিত,
যাতে তোমরা তার প্রশস্ত পথ-ঘাট দিয়ে চলাচল করতে পার।’
নূহ বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তারা আমার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে আর আনুগত্য করছে তাদের (অর্থাৎ এমন সব লোকদের) যাদের মালধন আর সন্তানাদি তাদের ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছুই বৃদ্ধি করেনি,
আর তারা ষড়যন্ত্র করেছিল সাংঘাতিক ষড়যন্ত্র।
আর তারা বলেছিল, তোমাদের দেবদেবীদের কক্ষনো পরিত্যাগ করো না, আর অবশ্যই পরিত্যাগ করো না ওয়াদ সুআ‘আকে, আর না ‘ইয়াগুস, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে।
তারা গুমরাহ করেছে অনেককে, তুমি যালিমদের গুমরাহী ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করো না।
পাপের কারণে তাদেরকে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে, পরে তাদেরকে দাখিল করা হয়েছে আগুনে, অত:পর তারা আল্লাহকে ছাড়া কাউকে সাহায্যকারী পায়নি।
নূহ বলল, ‘হে আমার রব্ব! ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী কাফিরদের একজনকেও তুমি রেহাই দিও না।
তুমি যদি তাদেরকে রেহাই দাও, তাহলে তারা তোমার বান্দাহদেরকে গুমরাহ করে দেবে আর কেবল পাপাচারী কাফির জন্ম দিতে থাকবে।
হে আমার রব্ব! তুমি ক্ষমা কর আমাকে, আমার পিতামাতাকে যারা আমার গৃহে মু’মিন হয়ে প্রবেশ করে তাদেরকে আর মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদেরকে; আর যালিমদের জন্য ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করো না।’