নূন, কলমের শপথ আর লেখকেরা যা লেখে তার শপথ।
তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে তুমি পাগল নও।
তোমার জন্য অবশ্যই আছে অফুরন্ত পুরস্কার,
নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের উচ্চমার্গে উন্নীত।
শীঘ্রই তুমি দেখতে পাবে আর তারাও দেখবে,
তোমাদের মধ্যে কে পাগলামিতে আক্রান্ত।
তোমার প্রতিপালক বেশি জানেন কে তাঁর পথ থেকে গুমরাহ হয়ে গেছে, আর সঠিক পথপ্রাপ্তদেরকেও তিনি ভাল করে জানেন।
কাজেই তুমি মিথ্যাবাদীদের কথা মান্য কর না।
তারা চায় যে, তুমি যদি নমনীয় হও, তবে তারাও নমনীয় হবে,
তুমি তার অনুসরণ কর না, যে বেশি বেশি কসম খায় আর যে (বার বার মিথ্যা কসম খাওয়ার কারণে মানুষের কাছে) লাঞ্ছিত।
যে পশ্চাতে নিন্দা করে একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে ফিরে,
যে ভাল কাজে বাধা দেয়, সীমালঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ,
কঠোর স্বভাব, তার উপরে আবার কুখ্যাত।
কারণ সে সম্পদ আর (অনেক) সন্তানাদির অধিকারী।
তার কাছে যখন আমার আয়াত পাঠ করা হয় তখন সে বলে, ‘‘এতো আগে কালের লোকেদের কিসসা কাহিনী মাত্র।
আমি তার শুঁড়ের উপর দাগ দিয়ে দিব (অর্থাৎ তাকে লাঞ্ছিত করব)।
আমি এদেরকে (অর্থাৎ মক্কাবাসীদেরকে) পরীক্ষা করেছি যেমন আমি বাগানের মালিকদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম। যখন তারা কসম করে বলেছিল যে, তারা সকাল বেলায় অবশ্যই বাগানের ফল সংগ্রহ করে নেবে।
তারা ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেনি।
অতঃপর তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বাগানে এক বিপদ এসে পড়ল যখন তারা ছিল নিদ্রিত।
যার ফলে তা হয়ে গেল বিবর্ণ কাটা ফসলের মত।
সকালে একে অপরকে ডেকে বলল,
‘তোমরা যদি ফল সংগ্রহ করতে চাও তবে সকাল সকাল ক্ষেতে চল।
তারা চুপি চুপি কথা বলতে বলতে চলল।
‘আজ যেন সেখানে তোমাদের কাছে মিসকীনরা অবশ্যই ঢুকতে না পারে।’
তারা এক (অন্যায়) সিদ্ধান্তে সংকল্পবদ্ধ হয়ে সকাল করল।
অতঃপর তারা যখন বাগানটি দেখল তখন তারা বলল, ‘‘আমরা অবশ্যই পথ হারিয়ে ফেলেছি,
(অতঃপর ব্যাপারটি বুঝতে পারার পর তারা বলে উঠল) বরং আমরা তো কপাল পোড়া।’’
তাদের মধ্যেকার সবচেয়ে ভাল লোকটি বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছ না কেন?’
তারা বলল, ‘আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, আমরা সীমালঙ্ঘনকারীই ছিলাম।’
অতঃপর তারা একে অপরের দিকে এগিয়ে গিয়ে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করতে লাগল।
তারা বলল, ‘দুর্ভোগ আমাদের, আমরা ছিলাম সীমালঙ্ঘনকারী,
সম্ভবতঃ আমাদের প্রতিপালক এর পরিবর্তে আমাদেরকে উত্তম (বাগান) দিবেন, আমরা আমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হলাম।’
‘আযাব এ রকমই হয়ে থাকে। আর আখিরাতের ‘আযাব তো সবচেয়ে কঠিন। যদি তারা জানত!
মুত্তাক্বীদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে নি‘মাতে পরিপূর্ণ জান্নাত।
আমি কি আত্মসমর্পণকারীদেরকে অপরাধীদের মত গণ্য করব?
তোমাদের কী হয়েছে, তোমরা কেমনভাবে বিচার করে সিদ্ধান্ত দিচ্ছ?
তোমাদের কাছে কি (আল্লাহর নাযিলকৃত) কোন কিতাব আছে যা পড়ে তোমরা জানতে পার যে,
তোমাদের জন্য সেখানে তাই আছে যা তোমরা পছন্দ কর?
অথবা তোমাদের জন্য আমার উপর কি ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ কোন দায়বদ্ধতা আছে যে, তোমরা যা দাবী করবে তাই পাবে?
তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর (আল্লাহ যে তাদের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিতে দায়বদ্ধ) এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি জামিনদার (গ্যারান্টর)?
অথবা তাদের কি শরীক উপাস্য আছে, থাকলে তাদের শরীক উপাস্যদেরকে হাজির করুক- তারা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে।
যেদিন (ক্বিয়ামতে) পায়ের গোছা (হাঁটুর নিম্নভাগ) উন্মোচিত হবে আর তাদেরকে ডাকা হবে সেজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সেজদা করতে সক্ষম হবে না।
তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমান লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখনও তাদেরকে সেজদা করার জন্য ডাকা হত (কিন্তু তারা সেজদা করত না)
কাজেই ছেড়ে দাও আমাকে আর তাদেরকে যারা এ বাণীকে অস্বীকার করেছে। আমি তাদেরকে ক্রমে ক্রমে আস্তে আস্তে এমনভাবে ধরে টান দিব যে, তারা একটু টেরও পাবে না।
আমি তাদেরকে (লম্বা) সময় দেই, আমার কৌশল বড়ই মজবুত।
তুমি কি তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাচ্ছ যে, দেনার দায়ভার বহন করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে?
নাকি তাদের কাছে গায়বের খবর আছে যা তা তারা লিখে রাখে।
কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের হুকুমের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা কর, আর মাছওয়ালা [ইউনুস (আঃ)] এর মত (অধৈর্য) হয়ো না। স্মরণ কর যখন সে (তার প্রতিপালককে ডাক দিয়েছিল চিন্তায় দুঃখে আচ্ছন্ন হয়ে।
তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ যদি তার কাছে না পৌঁছত, তাহলে সে লাঞ্ছিত অবস্থায় ধুঁধুঁ বালুকাময় তীরে নিক্ষিপ্ত হত।
এভাবে তার প্রতিপালক তাকে বেছে নিলেন আর তাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করলেন।
কাফিররা যখন কুরআন শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়ে ফেলবে। আর তারা বলে, ‘‘সে তো অবশ্যই পাগল।’’
অথচ এ কুরআন বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ ছাড়া অন্য কিছুই নয়।