মুশরিকদের মধ্যেকার যাদের সঙ্গে তোমরা সন্ধিচুক্তি করেছিলে তাদের সাথে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হতে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া হল।
অতঃপর (হে কাফিরগণ!) চার মাস তোমরা যমীনে (ইচ্ছে মত) চলাফেরা করে নাও; আর জেনে রেখ যে, তোমরা আল্লাহকে নত করতে পারবে না, আল্লাহ্ই সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হতে বড় হাজ্জের দিনে মানুষদের কাছে ঘোষণা দেয়া হল যে আল্লাহ মুশরিকদের সাথে সম্পর্কহীন এবং তাঁর রসূলও। কাজেই এখন যদি তোমরা তাওবাহ কর, তাতে তোমাদেরই ভাল হবে, আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে রেখ যে, তোমরা আল্লাহকে হীন-দুর্বল করতে পারবে না, আর যারা কুফরী করে চলেছে তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।
কিন্তু মুশরিকদের মধ্যে যারা তোমাদের সঙ্গে চুক্তি রক্ষার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করেনি, আর তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সাথে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ কর। অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালবাসেন।
তারপর (এই) নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে ঘেরাও কর, তাদের অপেক্ষায় প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু তারা যদি তাওবাহ করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।
মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর বাণী শোনার সুযোগ পায়; তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দাও। এটা এজন্য করতে হবে যে, এরা এমন এক সম্প্রদায় যারা (ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে) অজ্ঞ।
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সঙ্গে মুশরিকদের চুক্তি কী করে কার্যকর থাকতে পারে? অবশ্য ঐসব লোক ছাড়া যাদের সঙ্গে তোমরা মাসজিদুল হারামের নিকট চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে; তারা যদ্দিন তোমাদের সঙ্গে চুক্তি ঠিক রাখে, তোমরাও তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তিতে দৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালবাসেন।
কীভাবে (চুক্তি থাকতে পারে) যদি তারা তোমাদেরকে পরাজিত করতে পারে তাহলে তারা তোমাদের সঙ্গে না আত্মীয়তার মর্যাদা দেয়, আর না ওয়াদা-অঙ্গীকারের; তারা তাদের মুখের কথায় তোমাদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে চায় কিন্তু তাদের অন্তর তা অস্বীকার করে, তাদের অধিকাংশই সত্যত্যাগী অপরাধী।
আল্লাহর আয়াতকে তারা (দুনিয়াবী স্বার্থে) অতি তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছে, আল্লাহর পথে (মানুষদের চলার ক্ষেত্রে) প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তারা যা করে কতই না জঘন্য সে কাজ।
কোন ঈমানদার ব্যক্তির ব্যাপারে তারা না কোন আত্মীয়তার মর্যাদা দেয়, আর না কোন ওয়াদা-অঙ্গীকারের। এরা হল সেই লোক যারা সীমালঙ্ঘনকারী।
এখন যদি তারা তাওবাহ করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেদের জন্য আমি স্পষ্ট করে নিদর্শন বলে দিলাম।
তারা যদি চুক্তি করার পর তাদের শপথ ভঙ্গ করে আর তোমাদের দীনের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে, তাহলে কাফিরদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে লড়াই কর, শপথ বলে কোন জিনিস তাদের কাছে নেই, (কাজেই শক্তি প্রয়োগ কর) যাতে তারা (শয়ত্বানী কার্যকলাপ থেকে) নিবৃত্ত হয়।
তোমরা সেই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লড়াই কেন করবে না যারা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, যারা রসূলকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল? প্রথমে তারাই তোমাদেরকে আক্রমণ করেছিল। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? তোমরা যাকে ভয় করবে তার সবচেয়ে বেশি হকদার হলেন আল্লাহ যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।
তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর, তোমাদের হাত দিয়েই আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন, তাদেরকে অপমানিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন আর মু’মিনদের প্রাণ ঠান্ডা করবেন।
তিনি তাদের মনের জ্বালা নিভিয়ে দিবেন, আল্লাহ যাকে চাইবেন তাওবাহ করার তাওফীক দিবেন, আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদেরকে এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে যে পর্যন্ত আল্লাহ জেনে না নেবেন তোমাদের মধ্যে কারা তাঁর পথে জিহাদ করেছে, আর আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মু’মিনদের ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু ও অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেন নি? তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ বিশেষভাবে অবহিত।
মুশরিকদের এটা কাজ নয় যে, তারা আল্লাহর মাসজিদের রক্ষণাবেক্ষণকারী সেবক হবে যখন তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরীর সাক্ষ্য দেয়, তাদের সমস্ত কাজ বরবাদ হয়ে গেছে, জাহান্নামেই তারা হবে চিরস্থায়ী।
আল্লাহর মাসজিদের আবাদ তো তারাই করবে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারাই হবে সঠিক পথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।
হাজীদেরকে পানি পান করানো আর মাসজিদে হারামের আবাদ করাকে কি তোমরা তাদের কাজের সমান মনে কর যারা আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে আর আল্লাহর পথে জিহাদ করে? আল্লাহর দৃষ্টিতে এরা সমান নয়। (যারা ভ্রান্তপথে আল্লাহর সন্তুষ্টি খুঁজে এমন) যালিম সম্প্রদায়কে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন না।
যারা ঈমান আনে, হিজরাত করে, আর নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, আল্লাহর নিকট তাদের বিরাট মর্যাদা রয়েছে, এরাই হল সফলকাম।
তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর দয়া ও সন্তুষ্টির, আর জান্নাতের যেখানে তাদের জন্য আছে স্থায়ী সুখ-সামগ্রী।
যেখানে তারা চিরদিন থাকবে। আল্লাহর কাছেই তো রয়েছে মহাপুরস্কার।
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের পিতা আর ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না যদি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীকেই বেশি ভালবাসে। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই যালিম।
বল, ‘যদি তোমাদের পিতারা, আর তোমাদের সন্তানেরা, আর তোমাদের ভাইয়েরা, আর তোমাদের স্ত্রীরা, আর তোমাদের গোষ্ঠীর লোকেরা আর ধন-সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর ব্যবসা তোমরা যার মন্দার ভয় কর, আর বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস (এসব) যদি তোমাদের নিকট প্রিয়তর হয় আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করা হতে, তাহলে অপেক্ষা কর যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর চূড়ান্ত ফয়সালা তোমাদের কাছে নিয়ে আসেন।’ আর আল্লাহ অবাধ্য আচরণকারীদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না।
বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদেরকে বহু যুদ্ধ ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন আর হুনায়নের যুদ্ধের দিন, তোমাদের সংখ্যার আধিক্য তোমাদেরকে গর্বে মাতোয়ারা করে দিয়েছিল, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি, যমীন সুপ্রশস্ত হওয়া সত্বেও তা তোমাদের নিকট সংকীর্ণই হয়ে গিয়েছিল, আর তোমরা পিছন ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে।
তারপর আল্লাহ তাঁর রসূলের উপর, আর মু’মিনদের উপর তাঁর প্রশান্তির অমিয়ধারা বর্ষণ করলেন, আর পাঠালেন এমন এক সেনাবাহিনী যা তোমরা দেখতে পাওনি, আর তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করলেন। এভাবেই আল্লাহ কাফিরদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকেন।
এরপরও আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে করবেন তাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।
ওহে বিশ্বাসীগণ! মুশরিকরা হল অপবিত্র, কাজেই এ বছরের পর তারা যেন মাসজিদে হারামের নিকট না আসে। তোমরা যদি দরিদ্রতার ভয় কর, তবে আল্লাহ ইচ্ছে করলে অচিরেই তাঁর অনুগ্রহের মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাব-মুক্ত করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহাবিজ্ঞানী।
যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না, আর শেষ দিনের প্রতিও না, আর আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করেছেন তাকে হারাম গণ্য করে না, আর সত্য দ্বীনকে নিজেদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে না তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর যে পর্যন্ত না তারা বশ্যতা সহকারে স্বেচ্ছায় ট্যাক্স দেয়।
ইয়াহূদীরা বলে, ‘উযায়র আল্লাহর পুত্র। আর নাসারারা বলে, ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র। এসব তাদের মুখের কথা। এতে তারা তাদের পূর্বেকার কাফিরদের কথারই অনুকরণ করে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন! কেমনভাবে তারা সত্য পথ থেকে দূরে ছিটকে পড়েছে।
আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা তাদের ‘আলিম আর দরবেশদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে; আর মারইয়াম-পুত্র মাসীহকেও। অথচ তাদেরকে এক ইলাহ ব্যতীত (অন্যের) ‘ইবাদাত করার আদেশ দেয়া হয়নি। তিনি ব্যতীত সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, পবিত্রতা আর মহিমা তাঁরই, (বহু ঊর্ধ্বে তিনি) তারা যাদেরকে (তাঁর) অংশীদার গণ্য করে তাত্থেকে।
তারা তাদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলোকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তা হতে দিবেন না, তিনি তাঁর আলোকে পূর্ণ না করে ছাড়বেন না, যদিও কাফিরগণ তা অপছন্দ করে।
তিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত আর সঠিক দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন যাবতীয় দ্বীনের উপর একে বিজয়ী করার জন্য যদিও মুশরিকগণ অপছন্দ করে।
হে বিশ্বাসীগণ! অবশ্যই ‘আলিম ও দরবেশদের অনেকেই ভুয়ো কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষদের সম্পদ গ্রাস করে থাকে আর আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে আর আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে না তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সুসংবাদ দাও।
যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে আর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে, (আর তাদেরকে বলা হবে) ‘এটা হল, যা তোমরা নিজেদের জন্য স্তুপীকৃত করেছিলে, কাজেই যা জমা করছিলে তার স্বাদ গ্রহণ কর।’
আসমান-যমীন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে (লৌহ মাহফুজে) মাসগুলোর সংখ্যা হল বার। তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটা হল সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। কাজেই ঐ সময়ের মধ্যে নিজেদের উপর যুলম করো না। মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে। জেনে রেখ, আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন।
নিষিদ্ধ মাসকে পিছিয়ে দেয়া কুফরীর উপর আরেক কুফরী কাজ যা দ্বারা কাফিরদেরকে পথভ্রষ্ট করা হয়। এক বছর তারা একটি মাসকে হালাল করে, আরেক বছর ঐ মাসটিকে হারাম করে যাতে আল্লাহর হারাম করা মাসগুলোর সংখ্যা পূর্ণ করা যায়। এভাবে তারা আল্লাহর হারাম করা মাসগুলোকে হারাম করে নেয়। তাদের খারাপ কাজগুলো তাদের কাছে আনন্দদায়ক। আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সঠিক পথ দেখান না।
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের হয়েছে কী যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয় তখন তোমরা আরো জোরে মাটি কামড়ে ধর। তোমরা কি আখেরাতের স্থলে দুনিয়ার জীবনকেই বেশি পছন্দ কর? আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী তো অতি সামান্য।
তোমরা যদি যুদ্ধাভিযানে বের না হও, তাহলে তোমাদেরকে ভয়াবহ শাস্তি দেয়া হবে, আর তোমাদের স্থলে অন্য সম্প্রদায়কে আনা হবে (অথচ) তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
যদি তোমরা তাকে [অর্থাৎ রসূল (সা.)-কে] সাহায্য না কর (তাতে কোনই পরোয়া নেই) কারণ আল্লাহ তো তাকে সেই সময় সাহায্য করেছেন যখন কাফিররা তাকে বের করে দিয়েছিল, সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন যখন তারা দু’জন গুহার মধ্যে ছিল, যখন সে তার সঙ্গীকে বলছিল, ‘চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন’। তখন আল্লাহ তার প্রতি তাঁর প্রশান্তি বর্ষণ করলেন আর তাকে এমন সেনাবাহিনী দিয়ে শক্তিশালী করলেন তোমরা যা দেখতে পাওনি, আর তিনি কাফিরদের মুখের বুলিকে গভীর নীচে ফেলে দিলেন। আর আল্লাহর বাণীই রয়েছে সর্বোচ্চ। আল্লাহ হলেন প্রবল পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী।
যুদ্ধাভিযানে বেরিয়ে পড়, অবস্থা হালকাই হোক আর ভারীই হোক (অস্ত্র কম থাকুক আর বেশি থাকুক) আর আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের মাল দিয়ে আর তোমাদের জান দিয়ে জিহাদ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, তোমরা যদি জানতে!
দুনিয়াবী কোন স্বার্থ থাকলে আর যাত্রা সহজ হলে তারা অবশ্যই তোমার সাথে যেত। কিন্তু পথ তাদের কাছে দীর্ঘ ও ভারী মনে হয়েছে। অচিরেই তারা আল্লাহর নামে হলফ করে বলবে, ‘আমরা যদি পারতাম তাহলে অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে বের হতাম।’ আসলে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করছে, আর আল্লাহ জানেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যেবাদী।
আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। কারা সত্য বলেছে তা স্পষ্ট না হতেই আর মিথ্যাবাদীদেরকে তুমি না চিনেই কেন তুমি তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে দিলে?
যারা আল্লাহয় ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে তারা তাদের মাল দিয়ে আর জান দিয়ে জিহাদ করা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য তোমার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে না। মুত্তাকীদের সম্পর্কে আল্লাহ খুবই অবগত আছেন।
তোমার কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা তারাই করে যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করে না, যাদের অন্তর সন্দেহপূর্ণ, কাজেই তারা তাদের সন্দেহের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
(যুদ্ধাভিযানে) বের হওয়ার তাদের যদি ইচ্ছেই থাকত তবে তারা সেজন্য অবশ্যই প্রস্ত্ততি নিত। কিন্তু তাদের অভিযানে গমনই আল্লাহর পছন্দ নয়, কাজেই তিনি তাদেরকে পশ্চাতে ফেলে রাখেন আর তাদেরকে বলা হয়, ‘যারা (নিস্ক্রিয় হয়ে) বসে থাকে তাদের সাথে বসে থাক’।
তারা যদি তোমাদের সঙ্গে বের হত তাহলে বিশৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছুই বাড়াত না আর তোমাদের মাঝে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মাঝে ছুটাছুটি করত, আর তোমাদের মাঝে তাদের কথা শুনার লোক আছে। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে খুব ভালভাবেই অবহিত আছেন।
আগেও তারা ফিতনা সৃষ্টি করতে চেয়েছে আর তোমার অনেক কাজ নষ্ট করেছে যতক্ষণ না প্রকৃত সত্য এসে হাজির হল আর আল্লাহর বিধান প্রকাশিত হয়ে গেল যদিও এতে তারা ছিল নাখোশ।
তাদের মাঝে এমন লোক আছে যারা বলে, ‘আমাকে অব্যাহতি দিন, আমাকে পরীক্ষায় ফেলবেন না।’ জেনে রেখ, তারা তো ফিতনাতে পড়েই আছে। বস্তুতঃ জাহান্নাম কাফিরদেরকে চারদিক থেকে ঘিরেই রেখেছে।
তোমার মঙ্গল হলে তা তাদেরকে মনোকষ্ট দেয়, আর তোমার উপর বিপদ আসলে তারা খুশির সঙ্গে এ কথা বলতে বলতে সরে পড়ে যে, ‘আমরা আগেই সাবধানতা অবলম্বন করেছিলাম।’
বলে দাও, ‘আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তাছাড়া অন্য কিছুই আমাদের ঘটবে না, তিনিই আমাদের রক্ষক, আর আল্লাহর উপরই মু’মিনদের ভরসা করা দরকার।’
বল, ‘তোমরা আমাদের জন্য যে জিনিসের অপেক্ষা করছ তা দু’টো ভালোর একটি ছাড়া আর কিছুই না (শাহাদাত কিংবা বিজয়) আর আমরা অপেক্ষা করছি এজন্য যে, আল্লাহ নিজেই তোমাদেরকে শাস্তি দেন অথবা আমাদের হাত দিয়ে দেয়ান। কাজেই অপেক্ষায় থাক, আমরা তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম।’
বল, ‘স্বেচ্ছায় দান কর আর অনিচ্ছায়, তোমাদের থেকে কক্ষনো তা গ্রহণ করা হবে না; তোমরা হলে এক ফাসিক সম্প্রদায়।’
তাদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য গ্রহণ নিষিদ্ধ করার কারণ এ ছাড়া আর কিছু নয় যে তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার করে, সলাতে আসলে আসে শৈথিল্যভরে আর দান করলেও করে অনিচ্ছা নিয়ে।
কাজেই তাদের ধন-সম্পত্তি আর সন্তান-সন্ততি যেন তোমার চোখ ধাঁধিয়ে না দেয়, ওসব দিয়েই আল্লাহ দুনিয়াতে ওদেরকে শাস্তি দিতে চান আর কাফির অবস্থাতেই যেন তাদের জান বাহির হয়।
তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলে যে, তারা তোমাদেরই মধ্যের লোক, তারা কক্ষনো তোমাদের মধ্যের লোক নয়, প্রকৃতপক্ষে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত লোক।
তারা পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার জায়গা পেলে কিংবা গিরিগুহা বা ঢুকে থাকার মত জায়গা পেলে সেখানেই তারা ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে যেত।
তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা সদাক্বাহ (বণ্টনের) ব্যাপারে তোমার প্রতি দোষারোপ করে, তাত্থেকে দেয়া হলে খুশি হয়, আর তাত্থেকে না দেয়া হলে সাথে সাথে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।
আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন তারা যদি তাতে সন্তুষ্ট থাকত আর বলত, ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, অচিরেই আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমাদেরকে দিবেন আর তাঁর রসূলও, আমরা আশা ভরসা নিয়ে আল্লাহর দিকেই চেয়ে থাকি।’
সদাক্বাহ হল ফকীর, মিসকীন ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তি ও ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (ব্যয়ের জন্য) আর মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরয। আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, মহাবিজ্ঞানী।
তাদের মাঝে এমন লোকও আছে যারা নাবীকে কষ্ট দেয় আর বলে তিনি কান কথা শুনেন। বল, ‘তোমাদের যাতে ভালো আছে সে তাই শোনে’। সে আল্লাহয় বিশ্বাস রাখে, আর মু’মিনদেরকেও বিশ্বাস করে, আর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য রহমত। অপরপক্ষে আল্লাহর রসূলকে যারা কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ ‘আযাব।
তোমাদেরকে খুশি করার জন্য তারা তোমাদের সামনে আল্লাহর নামে কসম করে। তারা যদি মু’মিন হয়ে থাকে তবে কাউকে খুশি করতে চাইলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলই এর সবচেয়ে বেশি হকদার।
তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন যেখানে সে হবে চিরস্থায়ী? আর এটা খুবই লাঞ্ছনার ব্যাপার।
মুনাফিকরা ভয় পায় তাদের মনের কথা প্রকাশ করে তাদের ব্যাপারে কোন সূরাহ নাযিল হয়ে যায় নাকি। বল, ‘ঠাট্টা করতে থাক, তোমরা যে ব্যাপারে ভয় পাও, আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিবেন’।
তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা জোর দিয়েই বলবে, ‘আমরা হাস্য রস আর খেল-তামাশা করছিলাম।’ বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রসূলকে নিয়ে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে?’
ওযর পেশের চেষ্টা করো না, ঈমান আনার পর তোমরা কুফরী করেছ। তোমাদের মধ্যেকার কোন দলকে ক্ষমা করলেও অন্যদেরকে শাস্তি দেব, কারণ তারা অপরাধী।
মুনাফিক পুরুষ আর মুনাফিক নারী সব এক রকম, তারা অন্যায় কাজের নির্দেশ দেয় আর সৎ কাজ করতে নিষেধ করে, (আল্লাহর পথে ব্যয় করার ব্যাপারে) হাত গুটিয়ে রাখে, তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, তাই তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন। মুনাফিকরাই তো ফাসিক।
আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের ওয়া‘দা দিয়েছেন, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, তা-ই তাদের জন্য যথেষ্ট। তাদের উপর আছে আল্লাহর অভিশাপ, আর আছে তাদের জন্য স্থায়ী ‘আযাব।
(তোমাদের কাজ-কারবার) তোমাদের আগের লোকেদের মতই, যারা ছিল তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তির অধিকারী, আর ধন-মাল আর সন্তান-সন্ততিতেও তোমাদের চেয়ে অধিক সমৃদ্ধিশালী, তাদের প্রাপ্য অংশ তারা ভোগ করে গেছে, এখন তোমরাও তোমাদের প্রাপ্য অংশ ভোগ কর যেমন তোমাদের আগের লোকেরা তাদের প্রাপ্য অংশ ভোগ করেছে, আর তোমরা অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত আছ যেমন তারা অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত ছিল, এরাই হল তারা দুনিয়া ও আখেরাতে যাদের কাজ-কর্ম নিস্ফল হয়ে গেছে, আর তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
তাদের কাছে কি তাদের আগের লোকদের সংবাদ আসেনি, নূহের জাতি, ‘আদ, সামূদ, ইব্রাহীমের সম্প্রদায় এবং মাদ্য়্যানের অধিবাসীবৃন্দ আর উল্টে দেয়া নগরসমূহের? তাদের কাছে তাদের রসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল, আল্লাহ তাদের উপর যুলম করেননি, আসলে (তারাই তাদের অন্যায় কার্যকলাপের মাধ্যমে) নিজেদের আত্মার উপর যুলম করেছিল।
মু’মিন পুরুষ আর মু’মিন নারী পরস্পর পরস্পরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, নামায ক্বায়িম করে, যাকাত দেয়, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। তাদের প্রতিই আল্লাহ করুণা প্রদর্শন করবেন। আল্লাহ তো প্রবল পরাক্রান্ত, মহা প্রজ্ঞাবান।
মু’মিন পুরুষ আর মু’মিন নারীর জন্য আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন জান্নাতের যার নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, আর জান্নাতে চিরস্থায়ী উত্তম বাসগৃহের; আর সবচেয়ে বড় (যা তারা লাভ করবে তা) হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই হল বিরাট সাফল্য।
হে নাবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তাদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন কর, তাদের বাসস্থান হল জাহান্নাম, আর তা কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল!
তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে তারা (অন্যায়) কিছু বলেনি, কিন্তু তারা তো কুফরী কথা বলেছে আর ইসলাম গ্রহণ করার পরও কুফরী করেছে। তারা ষড়যন্ত্র করেছিল কিন্তু তাতে সফল হয়নি, তাদের এ প্রতিশোধ স্পৃহার কারণ এছাড়া আর কিছু ছিল না যে আল্লাহ করুণাবশতঃ ও তাঁর রসূল তাদেরকে সম্পদশালী করে দিয়েছেন। এখন যদি তারা অনুশোচনাভরে এ পথ থেকে ফিরে আসে তবে তা তাদের জন্যই কল্যাণকর। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন। পৃথিবীতে রক্ষক আর সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে তারা পাবে না।
তাদের মধ্যেকার কিছুলোক আল্লাহর সঙ্গে ওয়া‘দা করেছিল, ‘যদি তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ হতে দান করেন তবে আমরা অবশ্যই দান করব আর অবশ্যই সৎ লোকদের মধ্যে শামিল থাকব।’
অতঃপর আল্লাহ যখন তাদেরকে স্বীয় করুণার দানে ধন্য করলেন, তখন তারা দান করার ব্যাপারে কার্পণ্য করল আর বে-পরোয়াভাবে মুখ ফিরিয়ে নিল।
পরিণামে আল্লাহর সঙ্গে কৃত তাদের ওয়াদা ভঙ্গের কারণে এবং মিথ্যাচারে লিপ্ত থাকার কারণে তাদের অন্তরে মুনাফিকী বদ্ধমূল করে দিলেন; ঐ দিন পর্যন্ত যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে।
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তাদের গোপন কথাবার্তা আর গোপন পরামর্শ সম্পর্কে অবহিত আছেন আর আল্লাহ তো যাবতীয় অদৃশ্য সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত আছেন।
মু’মিনদের মধ্যে যারা মুক্ত হস্তে দান করে, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে আর সীমাহীন কষ্টে দানকারীদেরকে যারা বিদ্রূপ করে আল্লাহ তাদেরকে জবাবে বিদ্রূপ করেন আর তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।
তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না কর (উভয়ই সমান), তুমি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ কক্ষনো তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফুরী করেছে। আর আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না।
(তাবুক অভিযানে) যারা পিছনে থেকে গিয়েছিল তারা রসূলের বিরোধিতায় বসে থাকাতেই আনন্দ প্রকাশ করেছিল আর তাদের ধন-সম্পদ ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে তারা অপছন্দ করেছিল। তারা বলেছিল, ‘গরমের মধ্যে অভিযানে বেরিও না’। বল, ‘জাহান্নামের আগুনই তাপে প্রচন্ডতম’। তারা যদি বুঝত!
তারা যেন কম হাসে এবং বেশী কাঁদে, তারা যে (পাপ) কামাই করছে তার ফলস্বরূপ।
আল্লাহ যদি তোমাকে তাদের কোন দলের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন আর যদি তারা (তোমার সঙ্গে) অভিযানে বের হবার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে তখন বলবে, ‘আমার সাথে কক্ষনো বের হতে পারবে না আর কক্ষনো আমার সঙ্গে গিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে পারবে না, তোমরা প্রথমবারেই নিস্ক্রিয় হয়ে বসে থাকাকেই বেশি পছন্দ করে নিয়েছো, কাজেই (এখন) পিছ-পড়াদের সাথেই বসে থাক’।
তাদের কেউ মারা গেলে তুমি কক্ষনো তাদের জন্য (জানাযার) নামায পড়বে না, আর তাদের কবরের পাশে দন্ডায়মান হবে না। তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সঙ্গে কুফুরী করেছে আর বিদ্রোহী পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।
তাদের মালধন আর সন্তান-সন্ততি তোমার যেন চোখ ধাঁধিয়ে না দেয়, দুনিয়াতে আল্লাহ সে সব দিয়েই তাদেরকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছে করেন আর কাফির অবস্থায় যেন তাদের প্রাণবায়ু নির্গত হয়।
যখন কোন সূরাহ অবতীর্ণ করা হয় যে, ‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর আর তাঁর রসূলের সঙ্গে থেকে জিহাদ কর’- তখন শক্তি-সামর্থ্য সম্পন্ন লোকেরা তোমার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করে আর বলে, ‘আমাদেরকে রেহাই দিন, যারা (ঘরে) বসে থাকে আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব।’
তারা পিছনে (ঘরে বসে) থাকা স্ত্রীলোকদের সাথে থাকাকেই পছন্দ করে, তাদের হৃদয়কে সীল করে দেয়া হয়েছে, কাজেই তারা কিছুই বুঝতে পারে না।
কিন্তু রসূল আর তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারা তাদের মাল দিয়ে এবং জান দিয়ে জিহাদ করে। যাবতীয় কল্যাণ তো তাদেরই জন্য। সফলকাম তো তারাই।
আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত যাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হল বিরাট সফলতা।
বেদুইনদের মধ্যেও ওজর-আপত্তি পেশকারীরা এসে অব্যাহতির আবেদন জানালো। যারা (নিজেদের ঈমান থাকার ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নিকট মিথ্যা বলেছিল তারাও পিছনে রয়ে গেল। তাদের (অর্থাৎ বেদুইনদের) মধ্যে যারা কুফুরী করেছে শীঘ্রই এক ভয়ঙ্কর ‘আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে।
দুর্বলের উপর, পীড়িতের উপর আর ব্যয় করার মত কোন সম্বল যাদের নেই তাদের উপর কোন অভিযোগ নেই, যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বস্ত হয়ে থাকে। সৎ কর্মপরায়ণদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করার কোন সুযোগ নেই, আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
তাদের বিরুদ্ধেও কোন অভিযোগ নেই যারা তোমার কাছে যখন বাহন চাওয়ার জন্য এসেছিল তখন তুমি বলেছিলে, ‘আমি তো তোমাদের জন্য কোন বাহন পাচ্ছি না’। তখন তারা ফিরে গেল, আর সে সময় তাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরে পড়ছিল- এ দুঃখে যে, ব্যয় বহন করার মত কোন কিছু তাদের ছিল না।
অভিযোগ তো তাদের বিরুদ্ধে যারা সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও (যুদ্ধে যাওয়া হতে) তোমার কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা করেছিল, যারা ঘরে বসা থাকা (স্ত্রী লোকদের) সঙ্গে থাকতেই পছন্দ করেছিল, আল্লাহ তাদের হৃদয়কে সীল করে দিয়েছেন আর এজন্য (কিসে নিজেদের কল্যাণ আছে আর কিসে অকল্যাণ) তা তারা জানে না।
তোমরা তাদের কাছে (যুদ্ধ শেষে) ফিরে আসলে তারা তোমাদের কাছে ওজর পেশ করবে। বল- ওজর পেশ করো না, তোমাদেরকে আমরা কক্ষনো বিশ্বাস করব না। আল্লাহ তোমাদের খবর আমাদের কাছে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ ও তাঁর রসূল অবশ্যই তোমাদের কাজকর্মের প্রতি দৃষ্টি রাখবেন। অতঃপর দৃশ্য ও অদৃশ্য সম্পর্কে যিনি জ্ঞাত তাঁর কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে, অতঃপর তোমরা যা করতে সে সম্পর্কে তিনি তোমাদের জানিয়ে দিবেন।
তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা তোমাদের নিকট আল্লাহর নামে শপথ করবে যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর। কাজেই তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর, তারা অপবিত্র, তাদের বাসস্থান জাহান্নাম, তারা যা করেছে এটাই তার ন্যায্য প্রাপ্য।
তারা তোমাদের কাছে শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের উপর খুশি হয়ে যাও, কিন্তু তোমরা তাদের উপর খুশি হলেও, আল্লাহ অবাধ্য সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না।
বেদুঈন আরবরা কুফুরী আর মুনাফিকীতে সবচেয়ে কঠোর, আর আল্লাহ তাঁর রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তার সীমারেখার ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার তারা অধিক উপযুক্ত, আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহা প্রজ্ঞাবান।
কতক বেদুঈন যা তারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাকে জরিমানা বলে গণ্য করে আর তোমাদের দুঃখ মুসিবতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, মন্দের চক্র তাদেরকেই ঘিরে ধরুক। আর আল্লাহ তো সব কিছুই শুনেন, সব কিছু জানেন।
কতক বেদুঈন আল্লাহতে ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করে আর তারা যা আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাকে তারা আল্লাহর নৈকট্য ও রসূলের দু‘আ লাভের মাধ্যম মনে করে, সত্যিই তা তাদের (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের মাধ্যম, অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করবেন, অবশ্যই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী আর যারা তাদেরকে যাবতীয় সৎকর্মে অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তাদের জন্য তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হল মহান সফলতা।
তোমাদের চতুষ্পার্শ্বে কতক বেদুঈন হল মুনাফিক, আর মাদীনাবাসীদের কেউ কেউ মুনাফিকীতে অনঢ়, তুমি তাদেরকে চেন না, আমি তাদেরকে চিনি, আমি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেব, (ক্ষুধা বা নিহত হওয়া এবং কবরের শাস্তি) অতঃপর তাদেরকে মহা শাস্তির পানে ফিরিয়ে আনা হবে।
আর অন্য কতক লোক তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে, তারা একটি সৎ কাজের সাথে আরেকটি মন্দ কাজকে মিশ্রিত করেছে, আশা করা যায় আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন, অবশ্যই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু।
তাদের সম্পদ থেকে সদাকাহ গ্রহণ করবে যাতে তা দিয়ে তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে পার। তুমি তাদের জন্য দু‘আ করবে, বস্তুতঃ তোমার দু‘আ তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক, আর আল্লাহ সবকিছু শোনেন সব কিছু জানেন।
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের (অনুশোচনাপূর্ণ) ক্ষমাপ্রার্থনা কবুল করে থাকেন আর সদাকাহ গ্রহণ করেন। আর আল্লাহই তো তাওবাহ কবূলকারী, অতি দয়ালু।
বল, তোমরা আমল করতে থাক। অচিরেই আল্লাহ তোমাদের আমালের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন এবং তাঁর রসূল ও মু’মিনগণও (লক্ষ্য রাখবে), আর অচিরেই তোমাদেরকে দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতার দিকে ফিরিয়ে আনা হবে, আর তিনি তখন তোমরা যে আমল করছিলে তা তোমাদের জানিয়ে দিবেন।
আর কতক আল্লাহর ফায়সালার অপেক্ষায় থাকল, তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন অথবা তাদের তাওবাহ কবূল করবেন; আল্লাহ সর্বজ্ঞ, বড়ই প্রজ্ঞাময়।
আর যারা মাসজিদ তৈরী করেছে ক্ষতিসাধন, কুফুরী আর মু’মিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, আর যে ব্যক্তি ইতোপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের নিমিত্তে, তারা অবশ্য অবশ্যই শপথ করবে যে, আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ব্যতীত নয়। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।
তুমি ওর ভিতরে কক্ষনো দাঁড়াবে না। প্রথম দিন থেকেই যে মাসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত, তোমার দাঁড়ানোর জন্য সেটাই অধিক উপযুক্ত, সেখানে এমন সব লোক আছে যারা পবিত্রতা লাভ করতে ভালবাসে, আর আল্লাহ পবিত্রতা লাভকারীদের ভালবাসেন।
কে উত্তম যে তার ভিত্তি আল্লাহভীরুতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর স্থাপন করে সে, না ঐ ব্যক্তি যে তার ভিত্তি স্থাপন করে পতনোম্মুখ একটি ধসের কিনারায় যা তাকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে ধসে পড়বে? আল্লাহ যালিমদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।
তাদের তৈরি ঘরটি তাদের অন্তরে সদা-সর্বদা সন্দেহের উদ্রেক করে যাবে যে পর্যন্ত না তাদের হৃদয়গুলো ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহা প্রজ্ঞাময়।
নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জান আর মাল কিনে নিয়েছেন কারণ তাদের জন্য (বিনিময়ে) আছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। অতঃপর (দুশমনদের) হত্যা করে এবং (নিজেরা) নিহত হয়। এ ওয়া‘দা তাঁর উপর অবশ্যই পালনীয় যা আছে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে। আল্লাহর চেয়ে আর কে বেশী নিজ ওয়া‘দা পালনকারী? কাজেই তোমরা যে ক্রয় বিক্রয় সম্পন্ন করেছ তার জন্য আনন্দিত হও, আর এটাই হল মহান সফলতা।
তারা অনুশোচনাভরে (আল্লাহর দিকে) প্রত্যাবর্তনকারী, ‘ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোযা পালনকারী, রুকু‘কারী, সাজদাহকারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী, অন্যায় কাজ হতে নিষেধকারী, আল্লাহর নির্ধারিত সীমা সংরক্ষণকারী, কাজেই (এসব) মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও।
নাবী ও মু’মিনদের জন্য শোভনীয় নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তারা আত্মীয়-স্বজন হলেও, যখন এটা তাদের কাছে সুস্পষ্ট যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।
ইবরাহীমের পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার ব্যাপারটি কেবলমাত্র তার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে যা সে তার পিতাকে দিয়েছিল। কিন্তু যখন এটা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সে আল্লাহর শত্রু, তখন সে তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করল; ইবরাহীম ছিল অতি কোমল হৃদয়, সহিষ্ণু।
আল্লাহ কোন সম্প্রদায়কে হিদায়াত দানের পর তাদেরকে গুমরাহ করেন না যে পর্যন্ত না তিনি তাদের কাছে স্পষ্ট করে দেন কোন্ বিষয়ে তাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ হলেন সর্ব বিষয়ে সর্বাধিক অবহিত।
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই, তিনিই জীবন দান করেন আর তিনিই মৃত্যু ঘটান। আল্লাহ ছাড়া তোমাদের নেই কোন অভিভাবক, নেই কোন সাহায্যকারী।
আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন নাবীর প্রতি, এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি যারা সংকটকালে তাকে অনুসরণ করেছিল। এমনকি তাদের মধ্যে কিছু লোকের অন্তর বেঁকে যাওয়ার উপক্রম হওয়ার পরেও আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি তাদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, বড়ই দয়ালু।
আর (তিনি অনুগ্রহ করলেন) ঐ তিনজনের প্রতিও যারা (তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে) পিছনে থেকে গিয়েছিল [কা‘ব ইবনে মালিক, মুরারা ইবনে রাবী‘আ ও হিলাল ইবনে উমাইয়্যা (রাযি।)] তাঁরা অনুশোচনার আগুনে এমনি দগ্ধীভূত হয়েছিলেন যে] শেষ পর্যন্ত পৃথিবী তার পূর্ণ বিস্তৃতি নিয়েও তাদের প্রতি সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল আর তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল আর তারা বুঝতে পারল যে, আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন আশ্রয়স্থল নেই তাঁর পথে ফিরে যাওয়া ব্যতীত। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন যাতে তারা অনুশোচনায় তাঁর দিকে ফিরে আসে। আল্লাহ অতিশয় তাওবাহ কবূলকারী, বড়ই দয়ালু।
ওহে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যপন্থীদের অর্ন্তভুক্ত হও।
মাদীনাবাসী ও তার চতুষ্পার্শ্বস্থ বেদুঈনদের জন্য উচিত নয় আল্লাহর রসূলের (সঙ্গ বাদ দিয়ে) পেছনে থেকে যাওয়া আর নিজেদের জীবনকে তাঁর জীবনের চেয়ে প্রিয় জ্ঞান করা। কেননা এমন কক্ষনো হবে না যে, তারা আল্লাহর পথে তৃষ্ণা, দৈহিক ক্লেশ ও ক্ষুধা ভোগ করবে, আর কাফিরদের ক্রোধ উদ্রেককারী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আর শত্রুদের নিকট থেকে কিছু লাভ করবে আর তার বিনিময়ে তাদের জন্য কোন নেক ‘আমাল লেখা হবে না (অবশ্যই লেখা হবে)। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিফল বিনষ্ট করেন না।
আর এটাও হবে না যে, তারা কম বা বেশী মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করবে আর (জিহাদে) তারা কোন উপত্যকা অতিক্রম করবে অথচ তা তাদের নামে লেখা হবে না (অবশ্যই লেখা হবে) যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কাজের উৎকৃষ্ট প্রতিদান দিতে পারেন।
মু’মিনদের সকলের একসঙ্গে অভিযানে বের হওয়া ঠিক নয়। তাদের প্রত্যেক দল থেকে একটি অংশ কেন বের হয় না যাতে তারা দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানের অনুশীলন করতে পারে এবং ফিরে আসার পর তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে যাতে তারা (অসদাচরণ) থেকে বিরত হয়?
হে মু’মিনগণ! যে সব কাফির তোমাদের নিকটবর্তী তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যাতে তারা তোমাদের মধ্যে দৃঢ়তা দেখতে পায়, আর জেনে রেখ যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন।
যখনই কোন সূরাহ নাযিল হয় তখন তাদের কতক লোক (বিদ্রূপ করে) বলে- ‘‘এতে তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি হল?’’(মুনাফিকরা জেনে রাখুক) যারাই ঈমান এনেছে তাদের ঈমান বৃদ্ধি হয় আর তারা এতে আনন্দিত হয়।
আর যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তাদের নাপাকীর উপর আরো নাপাকী বাড়িয়ে দেয় (প্রতিটি নতুন সূরা), আর তাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়।
তারা কি দেখে না যে, প্রতি বছরই তাদেরকে একবার বা দু’বার পরীক্ষায় ফেলা হয়; তারপরেও তারা তাওবাও করে না, আর শিক্ষাও গ্রহণ করে না।
যখনই কোন সূরাহ নাযিল হয় তখনই তারা পরস্পরে চোখ চাওয়া-চাওয়ি করে আর (ইঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে) ‘তোমাদেরকে কেউ দেখছে না তো?’’ অতঃপর তারা চুপিসারে সরে পড়ে। আল্লাহ তাদের অন্তরকে (সত্য পথ থেকে) ফিরিয়ে দিয়েছেন, কেননা তারা এমনই এক সম্প্রদায় যারা বুঝে না।
তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট একজন রসূল এসেছেন, তোমাদেরকে যা কিছু কষ্ট দেয় তা তার নিকট খুবই কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী, মু’মিনদের প্রতি করুণাসিক্ত, বড়ই দয়ালু।
এ সত্ত্বেও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বলে দাও- আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তাঁর উপরই আমি ভরসা করি, তিনি হলেন মহান আরশের মালিক।