All Islam Directory
1

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো, এতদসত্ত্বেও যারা কুফরী করেছে তারা (অন্যকে) তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করিয়েছে।

2

যিনি মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর (তোমাদের জীবনের জন্য) একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারিত করেছেন, এছাড়া আরেকটি নির্ধারিত মেয়াদ আছে (যে সম্পর্কিত জ্ঞান আছে) তাঁর কাছে, কিন্তু তোমরা সন্দেহই করে চলেছ।

3

আসমানসমূহ আর যমীনে তিনিই আল্লাহ, তোমাদের গোপন বিষয়াদি আর তোমাদের প্রকাশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে তিনি জানেন, আর তিনি জানেন যা তোমরা উপার্জন কর।

4

তাদের রব্বের নিদর্শনাবলী হতে এমন কোন নিদর্শন তাদের কাছে আসে না যা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় না।

5

(এখন) যে সত্য তাদের কাছে এসেছে তারা তা অস্বীকার করেছে। শীঘ্রই তাদের কাছে সে খবর আসবে যে সম্পর্কে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।

6

তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের পূর্বে আমি কত জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছি, তাদেরকে দুনিয়ায় (এমনভাবে) প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যে শক্তি-প্রতিষ্ঠা তোমাদেরকে দেয়া হয়নি, তাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছিলাম, তৈরি করেছিলাম নদী যা তাদের নিম্নদেশ দিয়ে প্রবাহিত হত, অতঃপর তাদের পাপের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি আর তাদের পরে নতুন জনগোষ্ঠীর উত্থান ঘটালাম।

7

আমি যদি তোমার উপর কাগজে লেখা কিতাব নাযিল করতাম আর তা তারা তাদের হাতে স্পর্শ করত, তাহলে অবিশ্বাসীরা অবশ্যই বলত এটা স্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছু না।

8

আর তারা বলে, আমাদের কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয় না কেন? আমি যদি ফেরেশতা পাঠাতাম তাহলে (যাবতীয় ব্যাপারে) চূড়ান্ত ফায়সালাই তো হয়ে যেত, অতঃপর তাদেরকে আর অবকাশ দেয়া হত না।

9

আর আমি যদি তাকে ফেরেশতা করতাম তবে তাকে মানুষের আকৃতি বিশিষ্টই করতাম, আর তাদেরকে অবশ্যই গোলকধাঁধায় ফেলে দিতাম যেমন ধাঁধাঁয় তারা এখন পড়েছে।

10

তোমার পূর্বেও রসূলদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে, অতঃপর যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত তাই তাদেরকে পরিবেষ্টন করে ফেলল।

11

বল, দুনিয়ায় পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণাম কী দাঁড়িয়েছিল।

12

বল, আসমানে আর যমীনে যা আছে তা কার? বল, আল্লাহরই। দয়া করা তিনি তাঁর জন্য কর্তব্য স্থির করে নিয়েছেন, তিনি কিয়ামাত দিবসে তোমাদের সবাইকে একত্রিত করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা ঈমান আনবে না।

13

রাতে (অন্ধকারে) আর দিনে (আলোয়) যা বাস করে তা তাঁরই, তিনি হলেন সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

14

বল, আমি কি আসমান যমীনের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে অভিভাবক বানিয়ে নেব, অথচ তিনিই খাওয়ান, তাঁকে খাওয়ানো হয় না, বল আমাকে আদেশ করা হয়েছে আমি যেন আত্মসমর্পণকারীদের প্রথম হই, আর তুমি কিছুতেই মুশরিকদের মধ্যে শামিল হবে না।

15

বল, যদি আমি আমার রবের অবাধ্য হই, তবে আমি বড় (ভয়াবহ) দিনের শাস্তির ভয় করি।

16

সে দিন যাকে (শাস্তি থেকে) রক্ষা করা হবে তাকে তো বড় অনুগ্রহ করা হবে। আর এটাই হবে সুস্পষ্ট সাফল্য।

17

আল্লাহ তোমার কোন ক্ষতি করতে চাইলে তিনি ছাড়া কেউ তা সরাতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ করতে চান, তবে তো সব কিছুই করার তাঁর ক্ষমতা রয়েছে।

18

তিনি তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকারী, তিনি হলেন প্রজ্ঞাময়, সর্ববিষয়ে ওয়াকিফহাল।

19

বল, সাক্ষ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় কোনটি? বল, আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। আর এ কুরআন আমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে যাতে আমি তার সাহায্যে তোমাদেরকে আর যাদের কাছে তা পৌঁছবে তাদেরকে সতর্ক করি। তোমরা কি এমন সাক্ষ্য দিতে পার যে, আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহও আছে? বল, আমি এমন সাক্ষ্য দেই না, বল তিনি তো এক ইলাহ আর তোমরা যে তাঁর অংশীদার স্থাপন কর, তা থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত।

20

আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা তাকে (অর্থাৎ নাবীকে) তেমনি চিনে যেমন চিনে তাদের নিজেদের সন্তানদেরকে, যারা নিজেদের আত্মার ধ্বংস সাধন করেছে, তারা ঈমান আনতে পারবে না।

21

তার থেকে বড় যালিম আর কে আছে যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যে রচনা করে অথবা তাঁর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে? যালিমরা কক্ষনো সফলকাম হবে না।

22

স্মরণ করে সে দিনকে, যে দিন আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করব আর যারা শিরক করেছিল তাদেরকে বলব- যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করতে তারা কোথায়?

23

তখন তারা এ কথা বলা ছাড়া আর কোন ফিতনা সৃষ্টি করতে পারবে না যে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর কসম! আমরা মুশরিক ছিলাম না।

24

লক্ষ্য কর তারা নিজেদের সম্পর্কে কেমন মিথ্যে কথা বলবে, আর তারা মিছেমিছি যা উদ্ভাবন করেছিল তা নিস্ফল হয়ে যাবে।

25

তাদের মধ্যে কতক লোক আছে যারা তোমার দিকে কান পাতে। তাদের অন্তরের উপর আমি পর্দা ঢেলে দিয়েছি যাতে তারা উপলব্ধি করতে না পারে, তাদের কানে আছে বধিরতা, সমস্ত নিদর্শন দেখলেও তারা তাতে ঈমান আনবে না, এমনকি যখন তারা তোমার কাছে আসে তোমার সাথে বিতর্ক করে। কাফিরগণ বলে এটা তো পূর্বেকার লোকেদের গল্প-কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়।

26

তারা তা (শোনা) থেকে অন্যদের বিরত করে, আর নিজেরাও তাত্থেকে দূরে সরে থাকে, তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস সাধন করে কিন্তু সে বোধ তাদের নেই।

27

যদি তুমি দেখতে যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারায় দাঁড় করানো হবে তখন তারা বলবে হায়! আমাদেরকে যদি আবার (পৃথিবীতে) পাঠানো হত, তাহলে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীকে মিথ্যে মনে করতাম না, আর আমরা মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।

28

বরং(আসল ব্যাপার হল) আগে (দুনিয়াতে) তারা (মিথ্যের আবরণে) যা গোপন করে রাখত এখন তা তাদের কাছে প্রকাশ করা হয়েছে আর তাদেরকে (পৃথিবীতে) ফিরিয়ে দেয়া হলে তারা আবার তা-ই করবে যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, নিশ্চয় তারা হল মিথ্যুক।

29

তারা বলে, আমাদের দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কোন জীবন নেই, আমাদেরকে আবার (জীবিত করে) উঠানো হবে না।

30

তুমি যদি দেখতে যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দাঁড় করানো হবে, তখন তিনি বলবেন, (তোমরা এখন যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছ) তা কি সত্য নয়? তারা বলবে, আমাদের রবের কসম তা সত্য। তিনি বলবেন, তোমরা কুফরী করেছিলে তার জন্য এখন শাস্তি ভোগ কর।

31

যারা আল্লাহর সাক্ষাতকে মিথ্যে জেনেছিল তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। এমনকি যখন কিয়ামাত হঠাৎ তাদের কাছে হাজির হবে তখন তারা বলবে, হায় আক্ষেপ! আমরা এ ব্যাপারে অবহেলা করেছিলাম। তারা তাদের পিঠে তাদের পাপের বোঝা বহন করবে। দেখ, তারা যা বহন করবে তা কতই না নিকৃষ্ট!

32

দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই না। যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য পরকালের জীবনই অতি কল্যাণময়, তবুও কি তোমাদের বোধদয় হবে না?

33

তারা যা বলে তা তোমাকে কষ্ট দেয় এটা আমি অবশ্যই ভালভাবে অবগত, কেননা তারা তো তোমাকে মিথ্যে মনে করে না, প্রকৃতপক্ষে যালিমরা আল্লাহর আয়াতকেই প্রত্যাখ্যান করে।

34

তোমার পূর্বেও রসূলগণকে মিথ্যে মনে করা হয়েছে কিন্তু তাদেরকে মিথ্যে মনে করা এবং কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তারা ধৈর্যধারণ করেছে, যতক্ষণ না তাদের কাছে আমার সাহায্য এসেছে। আল্লাহর ওয়াদার পরিবর্তন হয় না, নাবীগণের কিছু সংবাদ তো তোমার নিকট পৌঁছেছেই।

35

তাদের উপেক্ষা যদি তোমার কাছে কঠিন বলে মনে হয় তাহলে পারলে ভূগর্ভে সুড়ঙ্গের কিংবা আকাশে আরোহণের জন্য সিঁড়ির সন্ধান কর অত:পর তাদের কাছে (নতুন) নিদর্শন হাজির কর। আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাদের সকলকে সৎপথে একত্র করতেন। কাজেই তুমি মূর্খদের মত হয়ো না।

36

যারা শোনে শুধু তারাই ডাকে সাড়া দেয়। আর মৃতকে আল্লাহ আবার জীবিত করবেন; অতঃপর তাঁর দিকেই তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

37

তারা বলে, তার কাছে তার রবের নিকট হতে কোন নিদর্শন নাযিল হয় না কেন? বল, অবশ্যই আল্লাহ নিদর্শন অবতীর্ণ করতে সক্ষম। কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই অবগত নয়।

38

ভূপৃষ্টে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই, আর দু’ডানা সহযোগে উড্ডয়নশীল এমন কোন পাখি নেই যারা তোমাদের মত একটি উম্মাত নয়। (লাওহে মাহ্ফুয অথবা আল-কুরআন) কিতাবে আমি কোন কিছুই বাদ দেইনি। অতঃপর তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদেরকে একত্রিত করা হবে।

39

যারা আমার আয়াতকে মিথ্যে জানে তারা বধির ও মুক। তারা আছে গভীর অন্ধকারে, আল্লাহ যাকে চান পথভ্রষ্ট করে দেন, আর যাকে চান সঠিক পথে স্থাপন করেন।

40

বল, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমাদের উপর যদি আল্লাহর শাস্তি এসে পড়ে কিংবা তোমাদের উপর ক্বিয়ামাত এসে যায় তাহলে কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবে? (বল না) তোমরা যদি সত্যবাদী হও।

41

বরং (এমন অবস্থায়) তোমরা একমাত্র তাঁকেই ডেকে থাক, অতঃপর ইচ্ছে করলে তিনি তা দূর করে দেন যার জন্য তোমরা তাঁকে ডাক আর তোমরা যাদেরকে তাঁর অংশীদার বানাও তাদের কথা ভুলে যাও।

42

তোমার পূর্বে আমি অনেক জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছি, কিন্তু তাদের অবাধ্যতার কারণে) অভাব অনটন আর দুঃখ-ক্লেশ দিয়ে তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা বিনীত হয়।

43

আমার শাস্তি যখন তাদের উপর পড়ল তখন তারা বিনয় নম্রতা অবলম্বন করল না কেন? বরং তাদের অন্তর আরো শক্ত হয়ে গেল, আর তারা যা করছিল শয়তান সেগুলোকে তাদের জন্য (খুব ভাল কাজ হিসেবে) সুশোভিত করে দিয়েছিল।

44

তাদেরকে যে নাসীহাত করা হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন আমি তাদের জন্য যাবতীয় নি‘আমাতের দরজা খুলে দিলাম; পরিশেষে, তাদেরকে যা দেয়া হল তাতে তারা যখন আনন্দে মেতে উঠল, হঠাৎ করে তাদেরকে ধরে বসলাম। তখন (যাবতীয় কল্যাণ থেকে) তারা নিরাশ হয়ে গেল।

45

অতঃপর যারা যুলম করেছিল তাদের শিকড় কেটে দেয়া হল, আর সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের জন্য।

46

(হে রাসূল) বল, তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি আর দর্শন শক্তি কেড়ে নেন, আর তোমাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেন, তাহলে আল্লাহ ছাড়া আর কে ইলাহ আছে সেগুলো তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেবে? লক্ষ্য কর আমি আমার (শক্তি-ক্ষমতার) নিদর্শনগুলোকে কেমন বিশদভাবে বর্ণনা করি কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।

47

বল, তোমরা কি চিন্তা করে দেখেছ, যদি তোমাদের কাছে আকস্মিক বা প্রকাশ্যে আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে তাহলে যালিম সম্প্রদায় ছাড়া আর কে ধ্বংস হবে?

48

আমি তো রসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি, অতঃপর (রসূলের আনুগত্য করে) যারা ঈমান আনে ও নিজেকে সংশোধন করে তাদের নেই কোন ভয়, নেই তাদের কোন দুঃখ।

49

আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যে মনে করে, শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে, কেননা তারা নাফরমানীতে লিপ্ত ছিল।

50

বল, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভান্ডার আছে, আর আমি অদৃশ্যের খবরও জানি না। আর আমি তোমাদেরকে এ কথাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা, আমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয় তাছাড়া (অন্য কিছুর) আমি অনুসরণ করি না। বল, অন্ধ আর চোখওয়ালা কি সমান, তোমরা কি চিন্তা করে দেখ না?

51

তুমি তা দিয়ে (অর্থাৎ কুরআন দিয়ে) তাদেরকে সতর্ক কর যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের দিকে একত্রিত করা হবে, যিনি ছাড়া তাদের জন্য কোন অভিভাবক নেই এবং সুপারিশকারী নেই- যাতে তারা সংযত হয়ে চলে।

52

যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁকে ডাকে তাদেরকে (অর্থাৎ তোমার নিকট সমাগত গরীব মু’মিনদেরকে) তুমি দূরে সরিয়ে দিও না। তাদের কোন ‘আমালের জন্য তোমাকে কোন জবাবদিহি করতে হবে না, আর তোমার কোন ‘আমালের জন্যও তাদেরকে কোন জবাবদিহি করতে হবে না, কাজেই তুমি যদি তাদেরকে অর্থাৎ (গরীব মু’মিনদেরকে) দূরে সরিয়ে দাও তবে তুমি যালিমদের মধ্যে গণ্য হবে।

53

আর এভাবেই আমি তাদের একদলকে অন্যদলের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছি যাতে তারা বলে, এরা কি সেই লোক আমাদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, আল্লাহ কি তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাহদের সম্পর্কে অধিক অবগত নন?

54

আমার আয়াতে বিশ্বাসী লোকেরা যখন তোমার কাছে আসে তখন তাদেরকে বল, ‘‘তোমাদের প্রতি সালাম’’। তোমাদের প্রতিপালক দয়া-রহমাতের নীতি নিজের প্রতি অবধারিত করে নিয়েছেন আর তা হচ্ছে যদি তোমাদের কোন ব্যক্তি না জেনে অন্যায় পাপ করে, অতঃপর তাওবাহ করে ও নিজেকে সংশোধন করে, তাহলে আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।

55

এভাবেই আমি আমার আয়াতগুলোকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করি যাতে অপরাধীদের পথ পরিষ্কাররূপে প্রকাশ পেয়ে যায়।

56

বল, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকো, তাদের ইবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। বল, আমি তোমাদের খোশ-খেয়ালের অনুসরণ করি না, তা করলে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাব, সে অবস্থায় আমি আর হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারব না।

57

বল, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট থেকে পাওয়া এক উজ্জ্বল প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত; অথচ তোমরা তা মিথ্যে মনে করেছ। যা তোমরা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও (অর্থাৎ আল্লাহর আযাব) তা আমার আয়ত্তে নেই। হুকুম বা কর্তৃত্বের মালিকানা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে নেই। তিনিই সত্যকথা বর্ণনা করেন, আর তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।

58

বল, তোমরা যা তাড়াতাড়ি চাচ্ছ তা যদি আমার কাছে থাকত তাহলে আমার আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যাপার তার ফায়সালা হয়ে যেত, অন্যায়কারীদের সম্পর্কে আল্লাহ খুবভাবেই অবহিত।

59

সমস্ত গায়বের চাবিকাঠি তাঁর কাছে, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না, জলে-স্থলে যা আছে তা তিনি জানেন, এমন একটা পাতাও পড়ে না যা তিনি জানেন না। যমীনের গহীন অন্ধকারে কোন শস্য দানা নেই, নেই কোন ভেজা ও শুকনো জিনিস যা সুস্পষ্ট কিতাবে (লিখিত) নেই।

60

তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের আত্মাকে নিয়ে নেন, আর দিনের বেলা যা তোমরা কর তা তিনি জানেন। অতঃপর দিনের বেলা তিনি তোমাদের জাগিয়ে দেন, যাতে জীবনের নির্দিষ্টকাল পূর্ণ হয়। অতঃপর তাঁর পানেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন, অতঃপর তিনি তোমাদের নিকট বর্ণনা করে দেবেন যা তোমরা করছিলে।

61

তিনি তাঁর বান্দাহদের উপর পূর্ণ কর্তৃত্বশীল, আর তিনি তোমাদের উপর রক্ষক নিযুক্ত করেন। অতঃপর তোমাদের কারো মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে আমার প্রেরিতগণ (ফেরেশতারা) তার মৃত্যু ঘটায়। নিজেদের কর্তব্য পালনে তারা বিন্দুমাত্র ত্রুটি করে না।

62

অতঃপর তাদেরকে তাদের প্রকৃত প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। সাবধান! কর্তৃত্ব তাঁরই, আর তিনি হিসাব গ্রহণে সর্বাপেক্ষা ত্বরিতগতি।

63

বল, বিনীতভাবে আর সংগোপনে যখন তাঁকে ডাক তখন জল-স্থলের অন্ধকার হতে কে তোমাদেরকে রক্ষা করে। (বিপদে পড়লে বলতে থাক) এত্থেকে তুমি যদি আমাদেরকে রক্ষা কর তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।

64

বল, আল্লাহই তোমাদেরকে এথেকে আর সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করেন, অতঃপর তোমরা তাঁর অংশী স্থির কর।

65

বল, তিনি তোমাদের উপর থেকে অথবা পদতল থেকে ‘আযাব পাঠাতে (সক্ষম) অথবা তোমাদেরকে দলে দলে বিভক্ত করার মাধ্যমে একদলকে অন্যদলের সংঘাত সংঘর্ষ ও হিংসা হানাহানির আস্বাদ গ্রহণ করাতে সক্ষম। লক্ষ্য কর, আমি নিদর্শনাবলী কেমন বিস্তারিত বর্ণনা করছি যাতে তারা উপলব্ধি করতে পারে।

66

তোমার কওম তা (অর্থাৎ ‘আযাবকে) মিথ্যে মনে করছে কিন্তু তা প্রকৃত সত্য। বল, আমি তোমাদের কর্মবিধায়ক নই।

67

প্রত্যেক (ভবিষ্যৎ) বাণীর (সত্যরূপে প্রকাশিত হওয়ার) জন্য একটা সময় নির্ধারিত করা আছে আর তা তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে।

68

যখন তুমি দেখ আমার আয়াত নিয়ে তারা উপহাসপূর্ণ আলোচনা করছে তখন তাদের থেকে সরে পড় যে পর্যন্ত তারা অন্য বিষয়ের আলোচনায় প্রবৃত্ত না হয়। আর যখন শয়ত্বান তোমাকে (আল্লাহর এই নাসীহাত) ভুলিয়ে দেয় তখন স্মরণ হয়ে গেলেই যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে আর বসবে না।

69

তাদের কোন কাজের হিসেব দেয়ার দায়-দায়িত্ব মুত্তাকীদের উপর নেই। কিন্তু উপদেশ দেয়া কর্তব্য যাতে ওরাও তাকওয়া অবলম্বন করে।

70

যারা তাদের দ্বীনকে খেলা তামাশা বানিয়ে নিয়েছে আর পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারিত করেছে তুমি তাদেরকে বর্জন কর। আর তা (অর্থাৎ কুরআন) দিয়ে তাদেরকে উপদেশ দাও যাতে কেউ স্বীয় কৃতকর্মের কারণে ধ্বংস না হয়, আল্লাহ ছাড়া তার কোন অভিভাবক নেই এবং কোন সুপারিশকারী নেই, (মুক্তির) বিনিময়ে সব কিছু দিতে চাইলেও তা তার থেকে গ্রহণ করা হবে না, ওরাই তারা যারা তাদের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস হবে, তাদের জন্য আছে ফুটন্ত গরম পানীয় আর মহা শাস্তি, যেহেতু তারা কুফরীতে লিপ্ত ছিল।

71

বল, আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমরা কি এমন কিছুকে ডাকব যা আমাদের উপকারও করে না, অপকারও করে না? আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত দানের পর আমরা কি পিছনে ফিরে যাব তার মত শয়ত্বান যাকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে আর দুনিয়ায় সে ঘুরে মরছে। অথচ তার সঙ্গী সাথীরা তাকে সঠিক পথের দিকে ডাক দিয়ে বলছে, এদিকে এসো। বল, আল্লাহর হিদায়াতই হচ্ছে সত্যিকারের হিদায়াত, বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্যই আমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে।

72

আরও (আদিষ্ট হয়েছি) নামায কায়িম করতে আর তাঁকে ভয় করতে আর তিনি হলেন (সেই সত্ত্বা) যাঁর কাছে তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।

73

তিনি আসমান আর যমীনকে সত্যিকারভাবে সৃষ্টি করেছেন (খেলা-তামাশার জন্য নয়)। আর যখনই তিনি বলবেন, (কিয়ামাত) ‘হও’, তখনই তা হয়ে যাবে, তাঁর কথাই প্রকৃত সত্য। যেদিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন কর্তৃত্ব থাকবে তাঁরই হাতে। অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্বন্ধে ওয়াকেফহাল, তিনি হিকমাতওয়ালা, সবকিছুর ব্যাপারে তিনি সবিশেষ জ্ঞাত।

74

আর (স্মরণ কর) যখন ইবরাহীম তার পিতা আজরকে বলেছিল, আপনি কি মূর্তিগুলোকে ‘ইলাহ’রূপে গ্রহণ করেছেন, আমি তো আপনাকে আর আপনার জাতিকে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত দেখছি।

75

এভাবে আমি ইবরাহীমকে আকাশ ও পৃথিবী রাজ্যের ব্যবস্থাপনা দেখিয়েছি যাতে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

76

রাতের আঁধার যখন তাকে আচ্ছন্ন করল তখন সে নক্ষত্র দেখতে পেল, (তখন) বলল, এটাই হচ্ছে আমার প্রতিপালক। কিন্তু যখন তা অস্তমিত হল, সে বলল, যা অস্তমিত হয়ে যায় তার প্রতি আমার কোন অনুরাগ নেই।

77

অতঃপর সে যখন চন্দ্রকে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখল তখন বলল, এটা হচ্ছে আমার প্রতিপালক। কিন্তু যখন তা অস্তমিত হল তখন সে বলল, আমার প্রতিপালক যদি আমাকে সঠিক পথের দিশা না দেন তাহলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।

78

অতঃপর যখন সে সূর্যকে অতি উজ্জ্বল হয়ে উদিত হতে দেখল তখন বলল, এটাই হচ্ছে আমার প্রতিপালক, এটাই হচ্ছে সব থেকে বড়। অতঃপর যখন তা অস্তমিত হল তখন সে বলল, হে আমার জাতির লোকেরা! তোমরা যেগুলোকে (আল্লাহর) অংশীদার স্থির কর সেগুলোর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

79

আমি একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর দিকে আমার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি যিনি আকাশমন্ডলী আর পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।

80

তার জাতি তার সাথে বাদানুবাদ করল। সে বলল, তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে আমার সাথে বাদানুবাদ করছ অথচ তিনি আমাকে সৎপথ দেখিয়েছেন। তোমরা যাদেরকে তার অংশীদার স্থির কর আমি তাদেরকে ভয় করি না। অবশ্য আল্লাহ যদি কিছু ইচ্ছে করেন (তবে সে কথা আলাদা)। প্রতিটি বস্তু সম্পর্কে আমার প্রতিপালকের জ্ঞান পরিব্যাপ্ত, তোমরা কি তা বুঝবে না?

81

তোমরা যাদেরকে (আল্লাহর) অংশীদার স্থির করেছ আমি তাদেরকে কীভাবে ভয় করতে পারি, যেখানে তোমরা আল্লাহর অংশীদার বানিয়ে নিতে ভয় কর না যে সম্পর্কে আল্লাহ কোন প্রমাণই নাযিল করেননি। নিরাপত্তা লাভের ব্যাপারে (এ) দু’টি দলের মধ্যে কোনটি বেশি হকদার? বল, যদি তোমাদের জানা থাকে।

82

যারা ঈমান এনেছে আর যুলম (অর্থাৎ শিরক) দ্বারা তাদের ঈমানকে কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা লাভ তারাই করবে আর তারাই হল সঠিক পথপ্রাপ্ত।

83

এ হল আমার যুক্তি-প্রমাণ যা আমি ইবরাহীমকে দিয়েছিলাম তার কাওমের বিপক্ষে, আমি যাকে ইচ্ছে মর্যাদায় উন্নীত করি। তোমাদের প্রতিপালক নিশ্চয়ই হিকমাতওয়ালা,সর্বজ্ঞ।

84

আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক আর ইয়াকূব; তাদের প্রত্যেককে সৎ পথ দেখিয়েছিলাম, আর এর পূর্বে নূহকে সৎ পথ দেখিয়েছিলাম আর তার বংশধর থেকে দাঊদ, সুলাইমান, আইঊব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকে (সৎ পথ দেখিয়েছিলাম), সৎ কর্মশীলদের আমি এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি।

85

আর যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ‘ঈসা ও ইলিয়াস- এরা সবাই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।

86

আর ইসমাঈল, আল ইয়াসা‘আ, ইউনুস ও লূত- এদের প্রত্যেককে আমি বিশ্বজগতে জাতিসমূহের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম।

87

তাদের পিতৃপুরুষ, বংশধর ও ভ্রাতৃবর্গ থেকে তাদেরকে বেছে নিয়েছি আর সত্য-সঠিক পথে পরিচালিত করেছি।

88

এ হচ্ছে আল্লাহর হিদায়াত, তিনি তাঁর বান্দাহদেরকে থেকে যাকে ইচ্ছে হিদায়াত করেন, তারা যদি শিরক করত তবে তাদের সব কৃতকর্ম বিনষ্ট হয়ে যেত।

89

এরা তারাই যাদেরকে আমি কিতাব, হিকমাত ও নবুওত দান করেছিলাম, এখন যদি তারা (অর্থাৎ বিধর্মীরা) এগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করে তাহলে আমি এগুলোর ভার এমন সম্প্রদায়ের কাছে সোপর্দ করেছি যারা (অর্থাৎ মু’মিনরা) এগুলোর অস্বীকারকারী হবে না।

90

ওরা হল তারা যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করেছিলেন, তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর; বল, এর জন্য (অর্থাৎ বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য) আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। এটা সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য উপদেশ বাণী।

91

তারা আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেনি যখন তারা এ কথা বলেছে যে, আল্লাহ কোন মানুষের কাছে কোন কিছুই অবতীর্ণ করেননি। বল, তাহলে ঐ কিতাব কে অবতীর্ণ করেছিলেন যা নিয়ে এসেছিলেন মূসা, যা ছিল মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা ও সঠিক পথের দিকদিশারী, কাগজের পৃষ্ঠায় যা তোমরা প্রকাশ কর আর বেশির ভাগই গোপন কর, যার সাহায্যে তোমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যা তোমরাও জানতে না, তোমাদের বাপ-দাদারাও জানত না? বল, (মূসার প্রতি ঐ কিতাব) আল্লাহ্ই (নাযিল করেছিলেন), অতঃপর তাদেরকে তাদের নিরর্থক আলোচনায় মত্ত হয়ে থাকতে দাও।

92

আর [এখন যা মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি নাযিল করা হয়েছে] এ কিতাব বরকতে ভরপুর, তাদের কাছে যে কিতাব আছে তার সত্যতা প্রতিপাদনকারী, আর তা মক্কা ও তার চতুষ্পার্শবস্থ এলাকার লোকেদেরকে সতর্ক করার জন্য প্রেরিত। যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে তারা এতে বিশ্বাস করে, আর তারা তাদের সলাতের হিফাযাত করে।

93

তার থেকে বড় যালিম আর কে যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যে কথা রচনা করে অথবা বলে, আমার প্রতি ওয়াহী নাযিল হয়; যদিও তার কাছে কিছুই অবতীর্ণ হয় না। আর যে বলে : আল্লাহ যা নাযিল করেন আমি শীঘ্রই তার অনুরূপ নাযিল করব। হায়! যদি তুমি ঐ যালিমদেরকে দেখতে পেতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকবে, আর ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, তোমাদের জানগুলোকে বের করে দাও, আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর আযাব দেয়া হবে যেহেতু তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলতে যা প্রকৃত সত্য নয় আর তাঁর নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে।

94

(ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ বলবেন) তোমরা আমার নিকট তেমনই নিঃসঙ্গ অবস্থায় হাজির হয়েছ যেমনভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, তোমাদেরকে যা (নি‘মাতরাজি) দান করেছিলাম তা তোমরা তোমাদের পেছনে ফেলে রেখে এসেছ, আর তোমাদের সাথে সেই সুপারিশকারীগণকেও দেখছি না যাদের সম্পর্কে তোমরা ধারণা করতে যে তোমাদের কার্য উদ্ধারের ব্যাপারে তাদের অংশ আছে। তোমাদের মধ্যেকার সম্পর্ক একেবারেই ছিন্ন হয়ে গেছে, আর তোমরা যে সব ধারণা করতে সে সব অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

95

আল্লাহই হচ্ছেন শস্য দানা ও বীজ বিদীর্ণকারী, তিনি মৃত থেকে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত থেকে মৃতকে। এই হচ্ছেন আল্লাহ; সৎপথ থেকে তোমরা কোথায় চলে যাচ্ছ?

96

তিনি ঊষার উন্মেষ ঘটান, তিনি রাত সৃষ্টি করেছেন শান্তি ও আরামের জন্য, সূর্য ও চন্দ্র বানিয়েছেন গণনার জন্য। এসব মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞাতা কর্তৃক নির্ধারিত।

97

তিনি তোমাদের জন্য নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা সেগুলোর সাহায্যে জলে স্থলে অন্ধকারে পথের দিশা লাভ করতে পার। আমি আমার নিদর্শনগুলোকে জ্ঞানীদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি।

98

তিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ হতে সৃষ্টি করেছেন, তারপর প্রত্যেকের জন্য একটা অবস্থান স্থল আছে আর একটি আছে তাকে গচ্ছিত রাখার জায়গা। জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেদের জন্য আমি আমার আয়াতগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি।

99

তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন অতঃপর তা দ্বারা আমি সকল প্রকার উদ্ভিদ উদগত করি, অতঃপর তা থেকে সবুজ পাতা উদ্গত করি, অতঃপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপন্ন করি, খেজুর গাছের মোচা থেকে ঝুলন্ত কাঁদি নির্গত করি, আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি, আর সৃষ্টি করি জায়তুন ও ডালিম, সেগুলো একই রকম এবং বিভিন্ন রকমও। লক্ষ্য কর তার ফলের প্রতি যখন গাছে ফল আসে আর ফল পাকে। এসবের ভিতরে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন আছে।

100

তারা জ্বীনকে আল্লাহর অংশীদার স্থির করে অথচ তাদেরকে তিনিই সৃষ্টি করেছেন, তারা না জেনে না বুঝে আল্লাহর জন্য পুত্র-কন্যা স্থির করে, তাদের এসব কথা হতে তিনি পবিত্র ও মহান।

101

তিনি আকাশমন্ডলী ও যমীনের উদ্ভাবক, কীভাবে তাঁর সন্তান হতে পারে যেহেতু তাঁর কোন সঙ্গীণীই নেই, সব কিছু তো তিনিই সৃষ্টি করেছেন, আর প্রতিটি জিনিস সম্পর্কে তিনি পূর্ণ জ্ঞান রাখেন।

102

এই হলেন তোমাদের প্রতিপালক, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, সব কিছুর স্রষ্টা; কাজেই তোমরা তাঁরই ‘ইবাদাত কর, তিনি সমস্ত বিষয়ের র্কমবিধায়ক।

103

দৃষ্টি তার নাগাল পায় না বরং তিনিই সকল দৃষ্টি নাগালে রাখেন, তিনি অতিশয় সূক্ষ্ণদর্শী, সব বিষয়ে ওয়াকিফহাল।

104

তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে (অন্তরের) আলো এসে পৌঁছেছে, যে লোক (এই আলো দিয়ে) দেখবে তাতে তার নিজেরই কল্যাণ হবে, আর যে অন্ধ থাকবে, তার অকল্যাণ তার ঘাড়েই পড়বে। (বাণী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে) আমি তোমাদেরকে পাহারা দেয়ার জন্য দায়িত্বপাপ্ত হইনি।

105

এভাবেই আমি নিদর্শনগুলোকে বার বার নানাভাবে বর্ননা করি। যার ফলে তারা (অর্থাৎ অবিশ্বাসীরা) বলে, তুমি (এসব কথা অন্যের কাছ থেকে) শিখে নিয়েছ, বস্তুত আমি জ্ঞানী লোকদের জন্য তা সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করি।

106

তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে যে ওয়াহী পাও তার অনুসরণ কর, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তুমি মুশরিকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।

107

আল্লাহ ইচ্ছে করলে তারা আল্লাহর অংশী স্থির করত না, (আসল শিক্ষা তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এখন তারা মানুক বা না মানুক) আমি তোমাকে তাদের উপর পাহারাদার পাঠায়নি (জোর করে আল্লাহর ‘ইবাদাত করিয়ে নেয়ার জন্য), আর তুমি তাদের পক্ষ থেকে কর্মসম্পাদনকারীও নও।

108

(ওহে মুমিনগণ!) আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তারা ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না, কেননা তারা তাদের অজ্ঞতাপ্রসূত শত্রুতার বশবর্তী হয়ে আল্লাহকে গালি দেবে। আর এভাবেই আমি প্রত্যেক জাতির জন্য তাদের কার্যকলাপকে তাদের দৃষ্টিতে চাকচিক্যময় করে দিয়েছি, অতঃপর তাদের প্রত্যাবর্তন (ঘটবে) তাদের প্রতিপালকের নিকট, তখন তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন যা কিছু তারা করতো।

109

তারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলে- তাদের নিকট যদি কোন নিদর্শন আসত তবে তারা অবশ্যই তাঁর প্রতি ঈমান আনত। বল, নিদর্শন (আনার ব্যাপারটি) হল আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। নিদর্শন আসলেও তারা যে ঈমান আনবে না, এ কথা কীভাবে তোমাদেরকে বুঝানো যাবে?

110

আর আমিও এদের অন্তর ও দৃষ্টিসমূহকে (অন্য দিকে) ফিরিয়ে দেব, আর তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার ঘূর্ণিপাকে অন্ধের মত ঘুরে মরার সুযোগ দেব।

111

আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ করতাম আর মৃতরা তাদের সাথে কথা বলত আর আমি তাদের সামনে যাবতীয় বস্তু হাজির করে দিতাম তবুও আল্লাহর ইচ্ছে ব্যতীত তারা ঈমান আনত না, মূলতঃ তাদের অধিকাংশই অজ্ঞতাপূর্ণ কাজ করে।

112

এভাবে আমি প্রত্যেক নাবীর জন্য মানুষ আর জ্বীন শয়তানদের মধ্য হতে শত্রু বানিয়ে দিয়েছি, প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে তারা একে অপরের কাছে চিত্তাকর্ষক কথাবার্তা বলে। তোমার প্রতিপালক ইচ্ছে করলে তারা তা করত না, কাজেই তাদেরকে আর তাদের মিথ্যে চর্চাকে উপেক্ষা করে চল।

113

তার দিকে (অর্থাৎ চিত্তাকর্ষক প্রতারণার দিকে) সে সব লোকের অন্তর আকৃষ্ট হতে দাও যারা আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে না, আর তাতেই তাদেরকে সন্তুষ্ট থাকতে দাও আর যে পাপকাজ তারা করতে চায় তা তাদেরকে করতে দাও।

114

বল, আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে বিচারক মানব, যখন তিনি সেই (সত্তা) যিনি তোমাদের নিকট কিতাব নাযিল করেছেন, যা বিশদভাবে বিবৃত। আমি যাদেরকে (পূর্বে) কিতাব দিয়েছিলাম তারা জানে যে, তা সত্যতা সহকারে তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ হয়েছে। কাজেই কিছুতেই তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের মধ্যে শামিল হয়ো না।

115

সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ। তাঁর বাণী পরিবর্তন করার কেউ নেই। আর তিনি হলেন সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

116

তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরণ কর তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে ফেলবে, তারা তো কেবল আন্দাজ-অনুমানের অনুসরণ করে চলে, তারা মিথ্যাচার ছাড়া কিছু করে না।

117

তোমার রব্ব খুব ভাল করেই জানেন কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে গেছে আর তিনি হিদায়াতপ্রাপ্তদের সম্পর্কেও সর্বাধিক অবহিত।

118

কাজেই যে পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে তা তোমরা খাও যদি তাঁর নিদর্শনাবলীতে তোমরা বিশ্বাসী হয়ে থাক।

119

তোমাদের কী হয়েছে যে, যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে তা তোমরা খাবে না? তোমাদের জন্য যা হারাম করা হয়েছে তা তোমাদের জন্য বিশদভাবে বাতলে দেয়া হয়েছে, তবে যদি তোমরা নিরুপায় হও (তবে ততটুকু নিষিদ্ধ বস্তু খেতে পার যাতে প্রাণে বাঁচতে পার), কিন্তু অনেক লোকই অজ্ঞানতাবশতঃ তাদের খেয়াল খুশী দ্বারা অবশ্যই (অন্যদেরকে) পথভ্রষ্ট করে, তোমার প্রতিপালক সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত।

120

তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন পাপ বর্জন কর, যারা পাপ অর্জন করে তারা তাদের অর্জনের যথোচিত প্রতিফল পাবে।

121

যাতে (যবহ করার সময়) আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি তা তোমরা মোটেই খাবে না, তা হচ্ছে পাপাচার, শায়ত্বনেরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সঙ্গে তর্ক-ঝগড়া করার জন্য প্ররোচিত করে; যদি তোমরা তাদের কথা মান্য করে চল তাহলে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে।

122

যে ব্যক্তি মৃত ছিল, তাকে আমি জীবিত করলাম, তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করলাম যার সাহায্যে সে মানুষের মাঝে চলাফেরা করে, সে কি তার মত যে অন্ধকারে নিমজ্জিত, যাত্থেকে সে কক্ষনো বেরিয়ে আসতে পারবে না। এটা এজন্য যে, কাফিররা যা করছে তা তাদের জন্য চাকচিক্যময় করে দেয়া হয়েছে।

123

এভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধী প্রধানদেরকে চক্রান্তজাল বিস্তার করার সুযোগ দিয়েছি, কিন্তু এ চক্রান্তের ফাঁদে তারা নিজেরাই পতিত হয়, কিন্তু সেটা তারা উপলব্ধিই করতে পারে না।

124

যখন তাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে তখন তারা বলে, ‘আমরা কক্ষনো বিশ্বাস করব না যতক্ষণ না আমাদেরকে তা দেয়া হয় যা আল্লাহর রসূলগণকে দেয়া হয়েছিল। (নির্বোধেরা এ আবদার করলেও) আল্লাহ খুব ভালভাবেই জানেন তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব কোথায় দিতে হবে, অপরাধীরা শীঘ্রই তাদের চক্রান্তের প্রতিফল হিসেবে আল্লাহর পক্ষ হতে লাঞ্ছনা ও কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।

125

আল্লাহ যাকে সৎপথ দেখাতে চান, তার অন্তরকে ইসলামের জন্য খুলে দেন, আর যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান তার অন্তরকে সংকীর্ণ সংকুচিত করে দেন, (তার জন্য ইসলাম মান্য করা এমনি কঠিন) যেন সে আকাশে আরোহণ করছে। যারা ঈমান আনে না তাদের উপর আল্লাহ এভাবে লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেন।

126

অথচ (ইসলামের) এ পথই তোমার প্রতিপালকের সরল-সঠিক পথ, যারা নাসীহাত গ্রহণ করে আমি তাদের জন্য নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করে দিয়েছি।

127

তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে শান্তিধাম, তিনিই তাদের পৃষ্ঠপোষক এজন্য যে তারা (সঠিক) ‘আমাল করেছিল।

128

যেদিন তাদের সবাইকে একত্রিত করা হবে, (সেদিন আল্লাহ বলবেন) হে জ্বিন সমাজ! তোমরা মানব সমাজের উপর খুব বাড়াবাড়ি করেছ। মানব সমাজের মধ্য থেকে তাদের বন্ধুরা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা পরস্পরে পরস্পরের নিকট হতে লাভবান হয়েছি আর আমরা আমাদের নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে গেছি যা তুমি আমাদের জন্য নির্ধারিত করেছিলে। আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামই হল তোমাদের বাসস্থান, তার মধ্যেই হবে তোমাদের চিরবাস, তবে আল্লাহ যদি অন্যরূপ ইচ্ছে করেন (তবে তাই হবে)। তোমার প্রতিপালক কুশলী এবং সর্বজ্ঞ।

129

এভাবেই আমি (পরকালে) যালিমদেরকে পরস্পরের সঙ্গী বানিয়ে দেব সেই উপার্জনের বিনিময়ে যা তারা (দুনিয়াতে পরস্পরে এক সঙ্গে মিলে) করছিল।

130

(আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন) হে জ্বিন ও মানব সমাজ! তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য হতে কি রসূলগণ আসেননি যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াত বর্ণনা করত আর এ দিনের সাথে যে সাক্ষাৎ ঘটবে সে ব্যাপারে তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শন করত? তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছি; মূলতঃ এ দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে, তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে তারা কাফির ছিল।

131

এটা এজন্য যে আল্লাহ কোন জনপদকে ধ্বংস করেন না অন্যায়ভাবে এবং (সত্যপথ কোনটি আর ভুলপথ কোনটি সে সম্পর্কে) যখন তারা থাকে অনবহিত।

132

প্রত্যেককে তার ‘আমাল অনুযায়ী মর্যাদা দেয়া হবে আর তারা যা করে সে ব্যাপারে তোমার প্রতিপালক বে-খবর নন।

133

তোমার প্রতিপালক অমুখাপেক্ষী, অত্যন্ত দয়াশীল। তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে অপসারিত করবেন এবং যাকে ইচ্ছে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন যেমন তিনি তোমাদেরকে অন্য সম্প্রদায়ের বংশ হতে সৃষ্টি করেছেন।

134

যা ঘটবে বলে তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা ঘটবেই, তা ব্যর্থ করে দেয়ার ক্ষমতা তোমাদের নেই।

135

বল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের (ধর্মীয়) অবস্থানে থেকে যা করছ করে যাও, আমিও আমার কাজ করছি, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কল্যাণময় পরিণতি কার হবে। যালিমগণ কখনও সফলকাম হয় না।

136

আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন তাত্থেকে তারা আল্লাহর জন্য একটা অংশ নির্দিষ্ট করে আর তারা তাদের ধারণামত বলে এ অংশ আল্লাহর জন্য, আর এ অংশ আমাদের দেবদেবীদের জন্য। যে অংশ তাদের দেবদেবীদের জন্য তা আল্লাহর নিকট পৌঁছে না, কিন্তু যে অংশ আল্লাহর তা তাদের দেবদেবীদের নিকট পৌঁছে। কতই না নিকৃষ্ট এই লোকদের ফায়সালা!

137

আর এভাবে তাদের দেবদেবীরা বহু মুশরিকদের চোখে নিজেদের সন্তান হত্যাকে আকর্ষণীয় করে দিয়েছে তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য এবং তাদের দ্বীনকে সন্দেহপূর্ণ করার জন্য। আল্লাহ যদি ইচ্ছে করতেন তবে তারা তা করতে পারত না, কাজেই তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা তাদের মিথ্যে নিয়ে মগ্ন থাকুক।

138

তারা তাদের ধারণা অনুসারে বলে, এই এই গবাদি পশু ও ফসল সুরক্ষিত। আমরা যার জন্য ইচ্ছে করব সে ছাড়া কেউ এগুলো খেতে পারবে না। এ সব তাদের কল্পিত। কতক গবাদি পশুর পিঠে চড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কতক গবাদি পশু যবহ করার সময় তারা আল্লাহর নাম নেয় না, (এসব বাধা-নিষেধ) আল্লাহর প্রতি মিথ্যে রচনা স্বরূপ করে থাকে। এসব মিথ্যে রচনার প্রতিফল তিনি শীঘ্রই তাদেরকে প্রদান করবেন।

138

তারা তাদের ধারণা অনুসারে বলে, এই এই গবাদি পশু ও ফসল সুরক্ষিত। আমরা যার জন্য ইচ্ছে করব সে ছাড়া কেউ এগুলো খেতে পারবে না। এ সব তাদের কল্পিত। কতক গবাদি পশুর পিঠে চড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কতক গবাদি পশু যবহ করার সময় তারা আল্লাহর নাম নেয় না, (এসব বাধা-নিষেধ) আল্লাহর প্রতি মিথ্যে রচনা স্বরূপ করে থাকে। এসব মিথ্যে রচনার প্রতিফল তিনি শীঘ্রই তাদেরকে প্রদান করবেন।

139

তারা আরো বলে, এসব গবাদি পশুর গর্ভে যা আছে তা আমাদের পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট, আর আমাদের স্ত্রীলোকদের জন্য নিষিদ্ধ, কিন্তু তা (অর্থাৎ গর্ভস্থিত বাচ্চা) যদি মৃত হয় তবে সকলের তাতে অংশ আছে। তাদের এই মিথ্যে রচনার প্রতিফল অচিরেই তিনি তাদেরকে দেবেন, তিনি বড়ই হিকমাতওয়ালা, সর্বজ্ঞ।

139

তারা আরো বলে, এসব গবাদি পশুর গর্ভে যা আছে তা আমাদের পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট, আর আমাদের স্ত্রীলোকদের জন্য নিষিদ্ধ, কিন্তু তা (অর্থাৎ গর্ভস্থিত বাচ্চা) যদি মৃত হয় তবে সকলের তাতে অংশ আছে। তাদের এই মিথ্যে রচনার প্রতিফল অচিরেই তিনি তাদেরকে দেবেন, তিনি বড়ই হিকমাতওয়ালা, সর্বজ্ঞ।

140

যারা মূর্খের মত না জেনে তাদের সন্তানদের হত্যা করেছে আর আল্লাহর নামে মিথ্যে কথা বানিয়ে নেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া জীবিকাকে হারাম করে নিয়েছে, তারা নিশ্চিতরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে আর তারা কস্মিনকালেও হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না।

140

যারা মূর্খের মত না জেনে তাদের সন্তানদের হত্যা করেছে আর আল্লাহর নামে মিথ্যে কথা বানিয়ে নেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া জীবিকাকে হারাম করে নিয়েছে, তারা নিশ্চিতরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে আর তারা কস্মিনকালেও হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না।

141

আর তিনি (আল্লাহ) যিনি লতাগুল্ম বিশিষ্ট আর লতা-বিশিষ্ট নয় এমন উদ্যানরাজি, খেজুর গাছ ও বিভিন্ন স্বাদের খাদ্যশস্য, একই ধরনের ও আলাদা ধরনের যায়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন। যখন ফল ধরে তখন ফল খাও, আর ফসল তোলার দিন (নির্ধারিত ওশর ও অনির্ধারিত দানের মাধ্যমে) হক আদায় কর, অপচয় করো না, নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।

142

গবাদি পশুর মধ্যে কতক আছে ভারবাহী আর কতক আছে গোশত ও আচ্ছাদনের সামগ্রী দানকারী, আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিয্ক্ব দিয়েছেন তাত্থেকে ভক্ষণ কর আর শায়ত্বনের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, সে তোমাদের খোলাখুলি দুশমন।

143

(নর-মাদী চার) জোড়ায় আট প্রকার, মেষের দু’টি, ছাগলের দু’টি। বল, তিনি কি নর দু’টি হারাম করেছেন, না মাদী দু’টি কিংবা মাদী দু’টির গর্ভে যা আছে তা? এ সম্পর্কিত জ্ঞানের ভিত্তিতে জবাব দাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।

144

আর উটের দু’টি, আর গরুর দু’টি। বল, এদের নর দু’টি কি তিনি হারাম করেছেন, না মাদী দু’টি অথবা মাদী দু’টির গর্ভে যা আছে তা? তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে যখন আল্লাহ এ রকম নির্দেশ দিয়েছিলেন? যে ব্যক্তি মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন রকম ‘ইলম ছাড়াই আল্লাহর সম্বন্ধে মিথ্যে রচনা করে তার থেকে বড় যালিম আর কে হতে পারে? বস্তুতঃ আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দান করেন না।

145

বল, আমার প্রতি যে ওয়াহী করা হয়েছে তাতে মানুষ যা আহার করে তার কিছুই নিষিদ্ধ পাই না মৃত, প্রবহমান রক্ত ও শূকরের মাংস ছাড়া। কারণ তা অপবিত্র অথবা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবহ করা ফাসিকী কাজ। তবে যে ব্যক্তি নিরুপায় হয়ে পড়ে কিন্তু সে নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী নয়, তাহলে তোমার প্রতিপালক বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

146

যারা ইয়াহূদী হয়েছে তাদের জন্য আমি যাবতীয় তীক্ষ্ণধার নখযুক্ত পশু হারাম করেছিলাম আর তাদের জন্য গরু-ছাগলের চর্বিও হারাম করেছিলাম, এগুলোর পিঠের কিংবা নাড়িভুড়ির বা হাড়ের সাথে লেগে থাকা চর্বি ছাড়া। তাদের অবাধ্যতার শাস্তি এভাবে তাদেরকে দিয়েছিলাম, আমি অবশ্যই সত্য কথা বলছি।

147

অতঃপর যদি তারা তোমাকে মিথ্যে মনে করে তবে তাদেরকে বল, তোমাদের প্রতিপালক প্রশস্ত দয়ার মালিক, (কিন্তু তাওবা না করে অপরাধীই থেকে গেলে) তবে অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর হতে তাঁর শাস্তি রদ হয় না।

148

যারা শিরক করেছে তারা বলবে, আল্লাহ ইচ্ছে করলে আমরা শিরক করতাম না, আর আমাদের পিতৃপুরুষরাও করত না, আর কোন কিছুই (আমাদের উপর) হারাম করে নিতাম না, এভাবে তাদের আগের লোকেরাও সত্যকে মিথ্যে গণ্য করেছিল, অবশেষে তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছিল। বল, তোমাদের কাছে কি প্রকৃত জ্ঞান আছে, থাকলে তা আমাদের কাছে পেশ কর, তোমরা তো কেবল ধারণা-অনুমানের অনুসরণ করে চলেছ, তোমরা তো মিথ্যাচারই করে যাচ্ছ।

149

চূড়ান্ত সত্য-নির্ভর প্রমাণ তো আল্লাহর কাছে আছে, আল্লাহ যদি চাইতেন তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাদের সকলকে সত্যপথে পরিচালিত করতেন।

150

বল, আল্লাহ যে এটা হারাম করেছেন সে ব্যাপারে যারা সাক্ষ্য দেবে তাদেরকে হাজির কর। তারা সাক্ষ্য দিলেও তুমি তাদের সাথে সাক্ষ্য দিও না। যারা আমার আয়াতগুলোকে অমান্য করে, আর যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না আর তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায় তুমি কক্ষনো তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না।

151

বল, ‘এসো, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ করেছেন তা পড়ে শোনাই, তা এই যে, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর, দরিদ্রতার ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না, আমিই তোমাদেরকে আর তাদেরকে জীবিকা দিয়ে থাকি, প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না, আল্লাহ যে প্রাণ হরণ করা হারাম করেছেন তা ন্যায় সঙ্গত কারণ ছাড়া হত্যা করো না। এ সম্পর্কে তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা চিন্তা- ভাবনা করে কাজ কর।

152

(ইয়াতীমরা) বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্য ছাড়া ইয়াতীমদের সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না। পরিমাপ ও ওজন ন্যায়সঙ্গতভাবে পূর্ণ কর, আমি কোন ব্যক্তির উপর সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেই না, যখন কথা বলবে তখন ইনসাফপূর্ণ কথা বলবে- নিকটাত্মীয়দের সম্পর্কে হলেও, আর আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা পূর্ণ কর। এসব ব্যাপারে তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।

153

আর এটাই আমার সঠিক সরল পথ, কাজেই তোমরা তার অনুসরণ কর, আর নানান পথের অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এভাবে তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা তাঁকে ভয় করে যাবতীয় পাপ থেকে বেঁচে চলতে পার।

154

অতঃপর (তোমরা অবগত হও যে) আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম যার মাধ্যমে আমি আমার নি‘য়ামাত পূর্ণ করে দিয়েছিলাম তাদের জন্য যারা উত্তম কাজ করে, তাতে ছিল যাবতীয় বিষয়ের বিশদ বিবরণ, (তা ছিল) সঠিক পথের দিশারী ও দয়া স্বরূপ যাতে তারা তাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে বিশ্বাস স্থাপন করে।

155

আর এ কিতাব যা আমি অবতীর্ণ করলাম তা বরকতময়, কাজেই তা মান্য কর, আর আল্লাহকে ভয় করে চল, যাতে তোমাদের উপর দয়া বর্ষিত হয়।

156

যাতে তারা না বলতে পারে যে কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বের দু’দল (ইয়াহূদী ও খ্রীস্টান) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল আর আমরা জানতাম না ওরা কী পড়ত আর পড়াত।

157

অথবা তোমরা না বলতে পার যে আমাদের উপর যদি কিতাব অবতীর্ণ হত তাহলে আমরা তাদের চেয়ে বেশি হিদায়াতপ্রাপ্ত হতাম। তাই এখন তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ, হিদায়াত ও রহমত এসেছে। অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহর (এ সব) আয়াতসমূহকে মিথ্যে মনে ক’রে তাত্থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে? আমার আয়াতসমূহ থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদেরকে অচিরেই আমি তাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণে নিকৃষ্টতম শাস্তি প্রদান করব।

158

তারা কি এই অপেক্ষায় আছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতারা আসবে অথবা তোমার প্রতিপালক (স্বয়ং) আসবেন কিংবা তোমার রবের কিছু নিদর্শন আসবে (তখন তারা ঈমান আনবে)? যে দিন তোমার রবের কতক নিদর্শন এসে যাবে সে দিন ঐ ব্যক্তির ঈমান কোন সুফল দিবে না যে পূর্বে ঈমান আনেনি বা ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি। বল, তোমরা অপেক্ষা কর (তাহলে দেখতে পাবে তোমাদের কুফরীর পরিণাম কী দাঁড়ায়), আমরাও অপেক্ষায় থাকলাম (আমাদের পুরস্কার প্রাপ্তি ও তোমাদের পরিণতি দেখার জন্য)।

159

যারা নিজেদের (পূর্ণ পরিণত) দ্বীনকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করে নিয়েছে আর (আপন আপন অংশ নিয়ে) দলে দলে ভাগ হয়ে গেছে তাদের কোন কাজের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপারটি পুরোপুরি আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। (সময় হলেই) তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে।

160

যে ব্যক্তি সৎকর্ম করবে তার জন্য আছে দশ গুণ পুরস্কার, আর যে ব্যক্তি অসৎকাজ করবে তাকে শুধু কৃতকর্মের তুল্য প্রতিফল দেয়া হবে, তাদের উপর অত্যাচার করা হবে না।

161

বল, আমাকে আমার রব্ব সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন (যা) সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, একনিষ্ঠ ইবরাহীমের পথ। সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

162

বল, আমার নামায, আমার যাবতীয় ‘ইবাদাত, আমার জীবন, আমার মরণ (সব কিছুই) বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই (নিবেদিত)।

163

তাঁর কোন শরীক নেই, আমাকে এরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর আমিই সর্বপ্রথম আত্মসমর্পণকারী।

164

আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য প্রতিপালক তালাশ করব? (অথচ প্রকৃতপক্ষে) তিনিই সব কিছুর প্রতিপালক। প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করে তার জন্য সে নিজেই দায়ী হবে। কোন ভারবহনকারীই অন্যের গুনাহের ভার বহন করবে না। অবশেষে তোমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল তোমাদের প্রতিপালকের নিকটেই, তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যে সকল বিষয়ে তোমরা মতভেদে লিপ্ত ছিলে (সে সব বিষয়ে প্রকৃত সত্য কোনটি)।

165

তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছেন, মর্যাদায় তোমাদের কতককে কতকের উপরে স্থান দিয়েছেন, আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি ওগুলোর মাধ্যমে তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, তোমার রব তো শাস্তি দানে দ্রুত (ব্যবস্থা গ্রহণ করেন) আর তিনি অবশ্যই বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।