ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চন্দ্র খন্ডিত হয়েছে,
কিন্তু তারা যখন কোন নিদর্শন দেখে তখন মুখ ফিরিয়ে নেয় আর বলে- ‘এটা তো সেই আগের থেকে চলে আসা যাদু।’
তারা সত্যকে অস্বীকার করে, আর নিজেদের কামনা বাসনার অনুসরণ করে। প্রতিটি বিষয়েরই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে (সময় আসলেই বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে)।
এই লোকেদের কাছে তো (অতীতের জাতিগুলোর) সংবাদ এসেছে যাতে আছে সাবধান বাণী।
তা (হল) সুদূর প্রসারী জ্ঞান, কিন্তু সেই সতর্কবাণী কোন কাজে আসেনি।
কাজেই (হে নবী) তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও (আর অপেক্ষা কর সে দিনের) যেদিন এক আহবানকারী (তাদেরকে) আহবান করবে এক ভয়াবহ বিষয়ের দিকে।
ভীত-শংকিত চোখে তারা তাদের কবর থেকে বের হয়ে আসবে- যেন তারা বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল।
ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে। কাফিররা বলবে- ‘‘কঠিন এ দিন’’।
তাদের আগে নূহের জাতিও সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা আমার বান্দাহকে অস্বীকার করেছিল আর বলেছিল- ‘‘একটা পাগল’’; আর তাকে ভয় দেখানো হয়েছিল।
তখন সে তার প্রতিপালককে ডেকেছিল- ‘‘আমি পরাস্ত হয়েছি, কাজেই তুমি এর প্রতিবিধান কর।’’
তখন আমি আকাশের দরজাগুলো খুলে দিয়ে মুষলধারায় বৃষ্টি বর্ষিয়েছিলাম।
আর যমীন থেকে উৎসারিত করেছিলাম ঝর্ণাধারা, অতঃপর (সব) পানি মিলিত হল যে পরিমাণ (পূর্বেই) নির্ধারিত করা হয়েছিল।
আর আমি নূহকে বহন করলাম কাষ্ঠ আর কীলক যুক্ত (নৌযানে)।
যা আমার চোখের সামনে (ও আমার তত্ত্বাবধানে) ভেসে চলল সেই ব্যক্তির পক্ষে প্রতিশোধ হিসেবে যাকে অমান্য ও অস্বীকার করা হয়েছিল।
এ (ঘটনা) টিকে আমি (চিরকালের জন্য) নিদর্শন হিসেবে রেখে দিলাম, অতএব উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি?
কত ভয়ংকর ছিল আমার ‘আযাব ও ভীতি প্রদর্শন।
আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি?
‘আদ জাতি সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল, ফলে কত ভয়ংকর ছিল আমার ‘আযাব ও ভীতি প্রদর্শন।
আমি তাদের উপর পাঠিয়েছিলাম ঝঞ্ঝাবায়ু এক অবিরাম অশুভ দিনে,
মানুষকে তা উৎপাটিত করেছিল যেন তারা উৎপাটিত খেজুর গাছের কান্ড।
ফলে কত ভয়ংকর ছিল আমার ‘আযাব ও ভীতি প্রদর্শন।
আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?
সামূদ জাতিও ভয়প্রদর্শনকারীদেরকে অস্বীকার করেছিল,
তারা বলেছিল, ‘আমরা কি আমাদেরই মধ্যেকার মাত্র একটা লোকের অনুসরণ করব? তাহলে তো আমরা গুমরাহী আর পাগলামিতে পড়ে যাব।
আমাদের (এত মানুষের) মধ্যে শুধু কি তার উপরই বাণী পাঠানো হয়েছে? না, বরং সে বড়ই মিথ্যুক, দাম্ভিক।
আগামীকালই তারা জানতে পারবে কে বড়ই মিথ্যুক, দাম্ভিক
আমি একটা উষ্ট্রী পাঠাচ্ছি, তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, কাজেই (হে সালিহ!) তুমি তাদের আচরণ লক্ষ্য কর আর ধৈর্য ধর।
আর তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের মধ্যে (ও উষ্ট্রীর মধ্যে) পানি বণ্টিত হবে, প্রত্যেকের পানি পানের পালা আসবে।
শেষে তারা তাদের এক সঙ্গীকে ডাকল আর সে তাকে (অর্থাৎ উষ্ট্রীটিকে) ধরে হত্যা করল।
ফলে কত ভয়ংকর হয়েছিল আমার ‘আযাব ও ভীতি প্রদর্শন।
আমি তাদের উপর পাঠিয়েছিলাম একটি মাত্র প্রচন্ড ধ্বনি। ফলে তারা খোঁয়াড়ওয়ালাদের (নির্মিত) ভেঙ্গে চুরে যাওয়া শুকনা ডালপালার মত গুঁড়িয়ে গেল।
আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?
লূতের জাতি সতর্কবাণী প্রত্যাখ্যান করেছিল,
আমি তাদের উপর পাঠিয়েছিলাম প্রস্তরবর্ষী প্রচন্ড বাতাস, (যা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল) লূতের পরিবারকে বাদ দিয়ে। আমি তাদেরকে রাতের শেষ প্রহরে উদ্ধার করে নিয়েছিলাম।
আমার পক্ষ হতে অনুগ্রহস্বরূপ; এভাবেই আমি তাকে প্রতিফল দেই যে কৃতজ্ঞ হয়।
লূত আমার কঠোর পাকড়াও সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিল, কিন্তু তারা সতর্কবাণীর বিষয়ে বাক বিতন্ডা করেছিল।
তারা লূতকে তার মেহমানদের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করল তখন আমি তাদের চোখগুলোকে অন্ধ করে দিলাম আর বললাম ‘আমার ‘আযাব ও সতর্কবাণীর স্বাদ গ্রহণ কর।’
অতি সকালে নির্ধারিত শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল।
তখন আমি বললাম- ‘আমার শাস্তি ও সতর্কবাণীর স্বাদ গ্রহণ কর।
আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?
ফেরাউন গোষ্ঠীর কাছেও (আমার) সতর্কবাণী এসেছিল।
তারা আমার সকল নিদর্শনকে অস্বীকার করেছিল, তখন আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমতাবানের পাকড়াওয়ে।
তোমাদের (মক্কাবাসী) কাফিররা কি এ লোকেদের চেয়ে ভাল? নাকি (আসমানী) গ্রন্থাদিতে তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা লেখা আছে?
নাকি তারা বলে- ‘আমরা সংঘবদ্ধ দল, নিজেদের প্রতিরক্ষায় সক্ষম।
এ সংঘবদ্ধ দল শীঘ্রই পরাজিত হবে আর পিছন ফিরে পালাবে।
বরং ক্বিয়ামত হল (তাদের দুষ্কর্মের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য) তাদেরকে দেয়া নির্ধারিত সময়, ক্বিয়ামত অতি কঠিন, অতিশয় তিক্ত।
পাপীরা আছে গুমরাহী আর পাগলামির মধ্যে।
যেদিন তাদেরকে মুখের ভরে আগুনের মধ্যে হিঁচড়ে টেনে আনা হবে (তখন বলা হবে) ‘জাহান্নামের স্পর্শ আস্বাদন কর।’
আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।
আমার আদেশ তো মাত্র একটি কথা- চোখের পলকের মত।
আমি তোমাদের মত দলগুলোকে ইতোপূর্বে ধ্বংস করেছি, কাজেই উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি?
তারা যা কিছু করেছে তা আছে ‘আমালনামায়,
ছোট আর বড় সবই আছে লিপিবদ্ধ।
মুত্তাক্বীরা থাকবে বাগান আর ঝর্ণাধারার মাঝে,
প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদার স্থানে, সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী (আল্লাহ)’র নিকটে।