আলিম-লাম-মীম।
রোমানরা পরাজিত হয়েছে।
নিকটস্থ ভূমিতে, কিন্তু তারা তাদের পরাজয়ের পর শীঘ্রই জয়লাভ করবে।
কয়েক (তিন থেকে নয়) বছরের মধ্যেই; (কোন্ কাজ হবে) আগে ও (কোন্ কাজ হবে) পরে সে ফয়সালা আল্লাহরই। সেদিন মু’মিনরা আনন্দ করবে।
(সে বিজয় অর্জিত হবে) আল্লাহর সাহায্যে। যাকে ইচ্ছে তিনি সাহায্য করেন, তিনি মহাপরাক্রমশালী, বড়ই দয়ালু।
এটা আল্লাহর ও‘য়াদা, আল্লাহ তাঁর ও‘য়াদার ব্যতিক্রম করেন না, কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না।
তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক জানে, আর তারা পরকালের খবর রাখে না।
তারা কি তাদের মনে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এ দু’এর মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে ও নির্দিষ্ট কালের জন্য, কিন্তু অনেক মানুষ তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাতে নিশ্চিতই অবিশ্বাসী।
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা দেখত যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল। তারা শক্তিতে ছিল এদের চেয়ে অধিক প্রবল। তারা যমীন চাষ করত আর তা আবাদ করত এদের আবাদ করার চেয়ে বেশি। তাদের কাছে তাদের রসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের উপর যুলম করেননি, তারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলম করেছিল।
অতঃপর যারা মন্দ কাজ করত, তাদের পরিণাম হয়েছিল মন্দ; কারণ তারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করেছিল আর সেগুলো নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।
আল্লাহ সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর তিনি তার পুনরাবৃত্তি করবেন, অতঃপর তাঁর দিকেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে পড়বে।
তারা যাদেরকে শরীক গণ্য করত তাদের মধ্যে কেউ তাদের জন্য সুপারিশকারী সাজবে না এবং তারা তাদের শরীকদেরকে অস্বীকার করবে।
যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন মানুষরা পৃথক হয়ে যাবে।
অতঃপর যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে তাদেরকে জান্নাত দিয়ে পরিতুষ্ট করা হবে।
আর যারা কুফুরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও আখিরাতের সাক্ষাৎকে অস্বীকার করেছে, তাদেরকে ‘আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে।
অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর যখন তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হও আর সকালে,
এবং অপরাহ্নে ও যুহরের সময়ে; আর আসমানসমূহে ও যমীনে প্রশংসা তো একমাত্র তাঁরই।
তিনিই জীবন্তকে বের করেন মৃত থেকে আর মৃতকে বের করেন জীবন্ত থেকে। যমীনকে তিনিই পুনরায় জীবিত করেন তার মৃত্যুর পর, এভাবেই তোমাদেরকে বের করা হবে।
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল এই যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমরা এখন মানুষ, সবখানে ছড়িয়ে রয়েছ।
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিণী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তার কাছে শান্তি লাভ করতে পার আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। এর মাঝে অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা করে।
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল, আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা। জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই এতে আছে বহু নিদর্শন।
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল রাতে ও দিনে তোমাদের ঘুম এবং তোমাদের (দ্বারা) তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করা। মনোযোগী লোকেদের জন্য অবশ্যই এতে আছে অনেক নিদর্শন।
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল এই যে, তিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুৎ ভীতি ও ভরসা সঞ্চারীরূপে, আর তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন যা দিয়ে যমীনকে তার মৃত্যুর পর আবার জীবিত করেন, জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের জন্য অবশ্যই এতে বহু নিদর্শন আছে।
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল এই যে, আকাশ ও পৃথিবী তাঁর হুকুমেই দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে মাটি থেকে উঠার জন্য ডাক দেবেন একটি ডাক, তখন তোমরা উঠে আসবে।
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সব তাঁরই, সকলই তাঁর প্রতি অনুগত।
তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর তার পুনরাবৃত্তি করবেন আর তা তার জন্য খুবই সহজ। আকাশ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত তাঁর জন্যই, তিনিই মহাপরাক্রমশালী, বড়ই হিকমতওয়ালা।
আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই একটা দৃষ্টান্ত পেশ করছেনঃ আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তাতে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসদাসীরা কি অংশীদার যার ফলে তাতে তোমরা সমান? তোমরা কি তাদেরকে তেমনভাবে ভয় কর যেমন ভয় কর তোমাদের নিজেদের পরস্পরকে? এভাবে বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষদের জন্য আমি নিদর্শনাবলী বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করি।
বরং সীমালঙ্ঘনকারীরা কোন জ্ঞান ছাড়াই তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে; কাজেই আল্লাহই যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে সৎপথ দেখাবে কে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
কাজেই দ্বীনের প্রতি তোমার মুখমন্ডল নিবদ্ধ কর একনিষ্ঠভাবে। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতি তিনি মানুষকে দিয়েছেন, আল্লাহর সৃষ্টি কার্যে কোন পরিবর্তন নেই, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।
তাঁর অভিমুখী হও, আর তাঁকে ভয় কর, নামায প্রতিষ্ঠা কর, আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
যারা নিজেদের দ্বীনকে বিভক্ত করে ফেলেছে এবং বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গেছে। প্রত্যেক দল নিজেদের কাছে যা আছে তাই নিয়ে উল্লসিত।
মানুষকে যখন দুঃখ-বিপদ স্পর্শ করে তখন তারা তাদের প্রতিপালককে ডাকে তাঁর অভিমুখী হয়ে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ আস্বাদন করান তখন তাদের একদল তাদের প্রতিপালকের অংশীদার সাব্যস্ত করে বসে
আমি তাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছি তা অস্বীকার করার জন্য। তাহলে ভোগ করে নাও, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে!
আমি কি তাদের কাছে এমন কোন দলীল অবতীর্ণ করেছি যা তাদেরকে সেগুলোর কথা বলে তারা যেগুলোর শরীক করে?
আমি যখন মানুষকে অনুগ্রহ আস্বাদন করাই তখন তারা তাতে উল্লসিত হয়, তারপর তাদের হাত যা আগে পাঠিয়েছে তার ফলে দুর্দশা যখন তাদেরকে পেয়ে বসে, তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে।
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছে করেন রিযক প্রশস্ত করেন আর (যার জন্য ইচ্ছে) সীমাবদ্ধ করেন? বিশ্বাসী লোকেদের জন্য অবশ্যই এতে বহু নিদর্শন আছে।
কাজেই আত্মীয়দেরকে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য দিয়ে দাও আর অভাবগ্রস্ত এবং মুসাফিরদেরকেও। যারা আল্লাহর চেহারা (দর্শন) কামনা করে, এটা তাদের জন্য উত্তম, আর তারাই সফলকাম।
মানুষের ধন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধন বৃদ্ধি করে না। কিন্তু তোমরা আল্লাহর চেহারা (সন্তুষ্টি) লাভের উদ্দেশ্যে যে যাকাত দাও (তা বৃদ্ধি পায়), তারাই দ্বিগুণ প্রতিদান লাভ করে।
আল্লাহ্ই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিযক দিয়েছেন, অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর তোমাদেরকে জীবিত করবেন। তোমরা যাদেরকে (আল্লাহর) অংশীদার মান্য কর তাদের মধ্যে কেউ আছে কি এ সবের কোন কিছু করতে পারে? তারা যাদেরকে অংশীদার গণ্য করে আল্লাহ তাদের থেকে পবিত্র, বহু ঊর্ধ্বে।
মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ হতে) ফিরে আসে।
বল, পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ আগে যারা ছিল তাদের পরিণাম কী হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক।
কাজেই তুমি নিজেকে সত্য দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত রাখ, আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন দিন (ক্বিয়ামত দিবস) আসার পূর্বে যা কক্ষনো প্রত্যাহার করা হবে না। সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে যাবে (দু’ভাগে)।
যে কুফুরী করে সেই তার কুফুরীর শাস্তি ভোগ করবে, আর যারা সৎকর্ম করে তারা নিজেদেরই সুখ সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে।
যাতে তিনি স্বীয় অনুগ্রহভান্ডার থেকে তাদেরকে পুরস্কৃত করতে পারেন যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে। তিনি কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল এই যে, তিনি বায়ু প্রেরণ করেন সুসংবাদ দানের জন্য ও তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ আস্বাদন করানোর জন্য। তাঁর নির্দেশে নৌযান চলে যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।
তোমার পূর্বে আমি রসূলগণকে পাঠিয়েছিলাম তাদের নিজ নিজ জাতির নিকট। তারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল। অতঃপর যারা অন্যায় করেছিল আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলাম। মু’মিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।
আল্লাহ যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালার সঞ্চার করে, অতঃপর তিনি তা আকাশে ছড়িয়ে দেন যেভাবে ইচ্ছে করেন, অতঃপর তাকে খন্ড বিখন্ড করে দেন, তারপর তুমি দেখতে পাও তার মাঝ থেকে বৃষ্টি-ফোঁটা নির্গত হচ্ছে, অতঃপর তিনি তাঁর বান্দাহদের মধ্যে যাদের নিকট তিনি ইচ্ছে করেন তাদের কাছে যখন তা পৌঁছে দেন তখন তারা হয় আনন্দিত।
যদিও ইতোপূর্বে তাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণের পূর্বে তারা ছিল চরমভাবে হতাশ।
অতএব আল্লাহর রহমাতের ফল দেখে নাও, কীভাবে তিনি ভূমিকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করেন। এভাবেই নিশ্চয় তিনি মৃতকে জীবিত করবেন, কেননা সব কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান।
আমি যদি এমন বায়ু প্রেরণ করি যার ফলে তারা দেখে শস্য হলদে হয়ে গেছে, তখন তারা অবশ্যই অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়।
তুমি তো মৃতকে শুনাতে পারবে না, বধিরকেও শুনাতে পারবে না আহবান, যখন তারা পেছন ফিরে চলে যায়।
তুমি অন্ধদেরকেও তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে পথে আনতে পারবে না। যারা আমার নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস করে তুমি কেবল তাদেরকেই শুনাতে পারবে, কারণ তারা (আল্লাহর প্রতি) আত্মসমর্পণকারী।
তিনি আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে (অসহায়) দুর্বল অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন, দুর্বলতার পর দিয়েছেন শক্তি, শক্তির পর আবার দিয়েছেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছে করেন সৃষ্টি করেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, সবচেয়ে শক্তিধর।
যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন অন্যায়কারীরা কসম করে বলবে যে, তারা মূহূর্তকালের বেশি অবস্থান করেনি। এভাবেই তারা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হত।
আর যাদেরকে ঈমান ও জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলবে- তোমরা আল্লাহর কিতাব মতে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছ। এটাই হল পুনরুত্থান দিবস কিন্তু তোমরা জানতে না।
অন্যায়কারীদের ওযর আপত্তি সেদিন কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে সংশোধনেরও সুযোগ দেয়া হবে না।
আমি মানুষদের জন্য এ কুরআনে যাবতীয় দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি। তুমি যদি তাদের কাছে কোন নিদর্শন নিয়ে আস তাহলে কাফিররা অবশ্য অবশ্যই বলবে- তোমরা মিথ্যে বলা ছাড়া আর কিছুই করছ না।
যাদের জ্ঞান নেই এভাবেই আল্লাহ তাদের হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন।
কাজেই তুমি ধৈর্য ধর, আল্লাহর ও‘য়াদা সত্য। যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে না, তারা যেন তোমাকে উত্তেজিত না করতে পারে।