আলিফ-লাম-মীম।
আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব সকলের রক্ষণাবেক্ষণকারী।
তিনি সত্য সহকারে তোমার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যা পূর্বতন কিতাবের সমর্থক এবং তিনি তাওরাত ও ইঞ্জীল অবতীর্ণ করেছেন ।
ইতোপূর্বে মানবজাতির পথ প্রদর্শনের জন্য; আর তিনি সেই মানদন্ড নাযিল করেছেন যা হাক্ব ও বাতিলের পার্থক্য দেখিয়ে দেয়; নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফুরী করে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, দন্ডদাতা।
নিশ্চয়ই ভূমন্ডলের ও নভোমন্ডলের কোন জিনিসই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।
তিনিই তোমাদেরকে মায়ের পেটে যেভাবে ইচ্ছে আকৃতি দেন, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনি মহাশক্তিমান ও প্রজ্ঞাশীল।
তিনিই তোমার উপর এমন কিতাব নাযিল করেছেন, যার কতিপয় আয়াত মৌলিক-সুস্পষ্ট অর্থবোধক, এগুলো হল কিতাবের মূল আর অন্যগুলো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়; কিন্তু যাদের অন্তরে বক্রতা আছে, তারা গোলযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে উক্ত আয়াতগুলোর অনুসরণ করে যেগুলো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। মূলত: এর মর্ম আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না। যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলে যে, আমরা তার উপর ঈমান এনেছি, এ সবকিছুই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে, মূলতঃ জ্ঞানবান ব্যক্তিরা ছাড়া কেউই নসীহত গ্রহণ করে না।
হে আমাদের প্রতিপালক! সৎ পথ প্রদর্শনের পরে তুমি আমাদের অন্তরগুলোকে বক্র করে দিও না, আমাদেরকে তোমার নিকট হতে রহমত প্রদান কর, মূলতঃ তুমিই মহান দাতা।
হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি সমুদয় মানুষকে একদিন সমবেত করবে, যাতে কোনও সন্দেহ নাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ অঙ্গীকারের খেলাফ করেন না।
নিশ্চয়ই যারা কুফরী করে তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর সামনে কোন কাজে লাগবে না এবং তারাই আগুনের ইন্ধন।
তাদের স্বভাব ফেরাওনী দল এবং তাদের আগের লোকেদের মত যারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে; সুতরাং আল্লাহ তাদের গুনাহের দরুন তাদেরকে পাকড়াও করলেন, আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর।
যারা কুফরী করে তাদেরকে বলে দাও, ‘তোমরা অচিরেই পরাজিত হবে আর তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকানো হবে, ওটা কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থান’!
তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন আছে সেই দু’দল সৈন্যের মধ্যে যারা পরস্পর প্রতিদ্বন্দীরূপে দাঁড়িয়েছিল (বদর প্রান্তরে)। একদল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছিল এবং অপরদল ছিল কাফির, কাফিররা মুসলিমদেরকে প্রকাশ্য চোখে দ্বিগুণ দেখছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে স্বীয় সাহায্যের দ্বারা শক্তিশালী করে থাকেন, নিশ্চয়ই এতে দৃষ্টিমানদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।
মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান, স্ত্তপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভান্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ, আর আল্লাহ -তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল।
বল, আমি কি তোমাদেরকে এ সব হতেও অতি উত্তম কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা মুত্তাকী তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট এমন বাগান রয়েছে, যার নিম্নে নদী প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে আর রয়েছে পবিত্র সঙ্গী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি, বস্তুতঃ আল্লাহ বান্দাগণের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।
যারা প্রার্থনা করে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা কর এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর’।
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, (আল্লাহর প্রতি) আজ্ঞাবহ, (আল্লাহর পথে) ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী।
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই এবং ফেরেশতাগণ ও ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানীগণও (সাক্ষ্য দিচ্ছে যে,) তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই, তিনি মহাপরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী।
নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন হল ইসলাম। বস্তুতঃ যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা জ্ঞান লাভের পর একে অন্যের উপর প্রাধান্য লাভের জন্য মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহ্কে অস্বীকার করবে, (সে জেনে নিক) নিশ্চয়ই আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অতিশয় তৎপর।
অতঃপর যদি (আহলে কিতাব) তোমার সাথে তর্ক করে তবে বলে দাও, ‘আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছি আর আমার অনুসারীগণও আত্মসমর্পণ করেছে এবং আহলে কিতাব ও উম্মীগণকে বল, ‘তোমরা কি আত্মসমর্পণ করেছ’? অতঃপর যদি তারা আত্মসমর্পণ করে তবে নিশ্চয়ই তারা পথ পাবে আর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমার দায়িত্ব শুধু প্রচার করা। আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।
যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অমান্য করে, নাবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে এবং মানুষদের মধ্যে যারা ন্যায়-নীতি শিক্ষা দেয় তাদেরকে হত্যা করে, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও।
এরাই তারা যাদের সমুদয় ‘আমাল দুনিয়া ও আখেরাতে নিষ্ফল হবে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
তুমি কি তাদের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করনি যাদেরকে কিতাবের অংশ দেয়া হয়েছিল? তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে আহবান করা হয়েছিল, যাতে এটা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, এরপর তাদের একদল বিমুখতা অবলম্বন করে ফিরে যায়।
এটা এজন্য যে, তারা বলে, দিন কতক ছাড়া জাহান্নামের আগুন কক্ষনো আমাদেরকে স্পর্শ করবে না এবং তাদের কল্পিত ধারণাসমূহ দ্বীনের ব্যাপারে তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে।
অনন্তর তাদের কী দশা ঘটবে, যখন আমি তাদেরকে সেই দিনে একত্রিত করব, যে দিনটি সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই এবং প্রত্যেককে তার অর্জিত প্রতিফল পূর্ণভাবে দেয়া হবে আর তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবে না।
বল, ‘হে আল্লাহ! তুমি সমুদয় রাজ্যের মালিক, যাকে ইচ্ছে রাজ্য দান কর আর যার থেকে ইচ্ছে রাজ্য কেড়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছে সম্মানিত কর আর যাকে ইচ্ছে অপদস্থ কর, তোমারই হাতে সব রকম কল্যাণ, নিশ্চয়ই তুমি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান’।
তুমিই রাতকে দিনের ভিতর আর দিনকে রাতের ভিতর ঢুকিয়ে দাও, তুমিই জীবিতকে মৃত হতে বের কর এবং মৃতকে জীবিত হতে বের কর আর যাকে ইচ্ছে বেহিসাব রিয্ক্ব দান কর।
মু’মিনগণ যেন মু’মিনগণ ছাড়া কাফিরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে, মূলতঃ যে এমন করবে আল্লাহর সাথে তার কোন কিছুরই সম্পর্ক নেই, তবে ব্যতিক্রম হল যদি তোমরা তাদের যুলম হতে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর। আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন।
বল, ‘তোমরা তোমাদের অন্তরের বিষয়কে গোপন কর অথবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা জানেন, আর তিনি জানেন যা কিছু আকাশসমূহে এবং ভূভাগে আছে; আল্লাহ সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান’।
যে দিন প্রত্যেক আত্মা যা কিছু নেক ‘আমাল করেছে এবং যা কিছু বদ ‘আমাল করেছে তা বিদ্যমান পাবে; সেই আত্মা কামনা করবে যদি তার এবং ওর (অর্থাৎ তার মন্দ কর্মফলের) মধ্যে দুস্তর ব্যবধান হত। আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে সাবধান করছেন, বস্তুতঃ আল্লাহ বান্দাগণের প্রতি খুবই করুণাশীল।
বলে দাও, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসকল ক্ষমা করবেন, বস্তুতঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
বল, ‘তোমরা আল্লাহর ও রসূলের আজ্ঞাবহ হও’। অতঃপর যদি তারা না মানে, তবে (জেনে রেখ) আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।
নিশ্চয়ই আল্লাহ আদাম ও নূহকে এবং ইবরাহীমের ও ‘ইমরানের গোত্রকে বিশ্বজগতের উপর মনোনীত করেছেন।
এরা একে অন্যের বংশধর এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
(স্মরণ কর) যখন ‘ইমরানের স্ত্রী আরয করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার উদরে যা আছে, তাকে আমি একান্ত তোমার উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম, কাজেই আমার পক্ষ হতে তা গ্রহণ কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
অতঃপর যখন সে তাকে প্রসব করল, বলে উঠল, হে আমার প্রতিপালক! আমি কন্যা প্রসব করেছি এবং আল্লাহ ভাল করেই জানেন যা সে প্রসব করেছে; বস্তুতঃ পুত্র কন্যার মত নয় এবং আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম এবং আমি তাকে ও তার বংশধরকে বিতাড়িত শয়ত্বান হতে তোমার আশ্রয়ে ছেড়ে দিলাম।
তখন তার প্রতিপালক তাকে সন্তুষ্টি সহকারে গ্রহণ করলেন এবং তাকে উত্তমরূপে লালন পালন করলেন এবং যাকারিয়াকে তার তত্ত্বাবধায়ক করলেন। যখনই যাকারিয়া মারইয়ামের কক্ষে প্রবেশ করত, তার কাছে খাদ্য সামগ্রী দেখতে পেত; জিজ্ঞেস করত- হে মারইয়াম! ‘এসব কোত্থেকে তোমার কাছে আসে’? মারইয়াম বলত, ‘ওসব আল্লাহর নিকট হতে (আসে)’। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বেহিসাব রিযক দান করেন।
ওখানেই যাকারিয়া নিজ প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তোমার পক্ষ হতে একটি সুসন্তান দান কর। নিশ্চয় তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী’।
যখন যাকারিয়া ‘ইবাদাত কক্ষে সলাতে দন্ডায়মান তখন ফেরেশতারা তাকে সম্বোধন করে বলল : আল্লাহ তোমাকে ইয়াহ্ইয়া’র সুসংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহর পক্ষ হতে আগত কালেমার সত্যতার সাক্ষ্যদাতা, নেতা, গুনাহ হতে বিরত ও নেক বান্দাগণের মধ্য হতে একজন নাবী।
যাকারিয়া বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান হবে কীভাবে, আমি তো বার্ধক্যে পৌঁছেছি এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। তিনি বললেন, ‘এভাবেই, আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা-ই সম্পন্ন করে থাকেন’।
সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য কোন নিদর্শন দাও’। তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য নিদর্শন এই যে, তিনদিন তুমি ইশারা ছাড়া লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না এবং তোমার প্রতিপালককে অধিক স্মরণ করবে এবং সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে’।
স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বলেছিল, ‘হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে বেছে নিয়েছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন, আর তামাম দুনিয়ার নারীদের উপর তোমাকে মনোনীত করেছেন’।
হে মারইয়াম! ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগত হও, সাজদাহ কর এবং রুকূ‘কারীদের সঙ্গে রুকূ‘ কর’।
এসব অদৃশ্যের সংবাদ, আমি তোমার কাছে তা ওয়াহী দ্বারা পৌঁছে দিচ্ছি। বস্তুতঃ তুমি তাদের নিকট উপস্থিত ছিলে না যখন তাদের কোন্ ব্যক্তি মারইয়ামকে লালন-পালন করবে সেই ভাগ্য নির্ণয়ের জন্য কলম নিক্ষেপ করছিল এবং তুমি তাদের নিকট উপস্থিত ছিলে না, যখন তারা (মারইয়ামের অভিভাবক কে হবে তা নিয়ে) বাদানুবাদ করছিল।
(স্মরণ কর) যখন ফেরেশতারা বলল, ‘হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে তাঁর একটি কথার সুসংবাদ দিচ্ছেন। তার নাম মারইয়ামের পুত্র ঈসা-মসীহ, সে দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত ও সান্নিধ্য প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’
‘সে লোকেদের সাথে দোলনা থাকা অবস্থায় এবং বয়োঃপ্রাপ্ত অবস্থায় কথা বলবে এবং নেক বান্দাদের অন্তর্গত হবে।
মারইয়াম বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! কীভাবে আমার পুত্র হবে, অথচ আমাকে কোন মানব স্পর্শ করেনি’। তিনি বললেন, ‘এভাবেই’ আল্লাহ সৃজন করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন, তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘‘হয়ে যাও’’ সুতরাং তা হয়ে যায়।
আর তিনি তাকে কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দেবেন।
‘আর তিনি তাকে বানী ইসরাঈলের নিকট রসূল হিসেবে প্রেরণ করবেন’। সে বলবে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে নিদর্শনসহ তোমাদের নিকট এসেছি, আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা পাখীর মত একটা কায়া গঠন করব, অতঃপর তাতে ফুঁৎকার দেব, ফলে আল্লাহর হুকুমে তা পাখি হয়ে যাবে এবং আল্লাহর হুকুমে আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য করব ও আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করব এবং আমি তোমাদেরকে বলে দেব তোমাদের গৃহে তোমরা যা আহার কর এবং সঞ্চয় করে রাখ; নিশ্চয়ই এ কাজে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা মু’মিন হও।’
‘(আর আমি এসেছি) আমার সামনে তাওরাতের নিদর্শন যা রয়েছে তার সমর্থকরূপে যেন তোমাদের জন্য কোন কোন জিনিস হালাল করে দেই যা তোমাদের প্রতি হারাম ছিল এবং আমি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে নিদর্শনসহ তোমাদের নিকট এসেছি, কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে অনুসরণ কর’।
‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক, অতএব তাঁর ‘ইবাদাত কর, এটাই সরল পথ’।
অতঃপর ‘ঈসা যখন তাদের অবিশ্বাস অনুভব করল, তখন বলল, ‘কেউ আছে কি যে আল্লাহর পথে আমার সহায়ক হবে’। হাওয়ারীগণ বলল, ‘আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী, আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি এবং সাক্ষী থাকুন যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী’।
‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যা অবতীর্ণ করেছ আমরা তার উপর ঈমান এনেছি, রসূলের আনুগত্য স্বীকার করেছি, সুতরাং আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে লিপিবদ্ধ কর।’
এবং তারা কৌশল করেছিল এবং আল্লাহ্ও (জবাবে) কৌশল করেছিলেন, আল্লাহ কৌশলীদের শ্রেষ্ঠ।
(স্মরণ কর) যখন আল্লাহ ‘ঈসাকে বলেছিলেন, ‘হে ‘ঈসা! আমি তোমার সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করব (তোমাকে মৃত্যু ছাড়াই দুনিয়া থেকে কবজ করব) এবং তোমাকে আমার কাছে উঠিয়ে নেব এবং তোমাকে কাফিরদের হতে মুক্ত করব আর তোমার অনুসরণকারীদেরকে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের উপর বিজয়ী রাখব; অতঃপর আমার কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন, তখন আমি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেব যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছ।’
অতঃপর যারা অবিশ্বাসী, তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠোর শাস্তি দেব এবং কেউই তাদের সাহায্যকারী নেই।
পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে, তাদেরকে তিনি পুরোপুরি সাওয়াব দান করবেন, বস্তুতঃ আল্লাহ যালিমদেরকে ভালবাসেন না।
এসব আমি তোমাকে পড়ে শুনাচ্ছি আয়াতসমষ্টি ও জ্ঞানগর্ভ বাণী হতে।
আল্লাহর নিকট ঈসার অবস্থা আদামের অবস্থার মত, মাটি দ্বারা তাকে গঠন করে তাকে হুকুম করলেন, হয়ে যাও, ফলে সে হয়ে গেল।
এ বাস্তব ঘটনা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতেই, সুতরাং তুমি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে ব্যক্তি তোমার সাথে (ঈসার সম্বন্ধে) বিতর্ক করবে তাকে বল, ‘আসো, আমাদের পুত্রদেরকে এবং তোমাদের পুত্রদেরকে আর আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে আহবান করি, অতঃপর আমরা মুবাহলা করি আর মিথ্যুকদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।
নিশ্চয়ই এটা প্রকৃত ঘটনা। আল্লাহ ছাড়া অন্য সত্য ইলাহ নেই। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।
তা’ সত্ত্বেও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কলহ সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে বিশেষভাবে অবহিত।
বল, ‘হে আহলে কিতাব! এমন এক কথার দিকে আসো, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই, তা এই যে, আমরা আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো ‘ইবাদাত করব না এবং কোন কিছুকে তাঁর শরীক করব না এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাদের মধ্যে কেউ কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করব না। তারপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা এ বিষয়ে সাক্ষী থাক যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী।
হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন ইবরাহীম সম্পর্কে তর্ক করছ? তাওরাত এবং ইঞ্জিল তো তারপরেই অবতীর্ণ হয়েছে, তোমরা কি তাও বুঝ না?
বস্তুতঃ তোমরাই এমন লোক যে, যে সম্পর্কে তোমাদের কিছু জ্ঞান আছে, সে বিষয়ে তো বিতর্ক করেছ, তোমরা এমন বিষয়ে কেন বিতর্ক করছ যে বিষয়ে তোমাদের কোনই জ্ঞান নেই? বস্তুতঃ আল্লাহ্ই জ্ঞাত আছেন, তোমরা জ্ঞাত নও।
ইবরাহীম না ইয়াহূদী ছিল, না নাসারা, বরং একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণকারী এবং সে মুশরিক দলের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
নিশ্চয় ইবরাহীমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় সেই লোকেরাই অধিক হকদার যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নাবী, আর যারা ঈমান এনেছে, বস্তুতঃ আল্লাহ মু’মিনদের অভিভাবক।
কিতাবধারীদের একদল চায় যাতে তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারে, অথচ তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকেও পথভ্রষ্ট করে না, কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারে না।
হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করছ, অথচ তোমরা নিজেরাই তার সাক্ষী?
হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করছ আর জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করছ।
আহলে কিতাবের একটা দল বলল, যারা ঈমান এনেছে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার উপর দিনের শুরুতে তোমরা ঈমান আন এবং দিনের শেষে অস্বীকার (কুফরী) কর, হয়ত তারা (ইসলাম ত্যাগ করে) ফিরে আসবে।
‘এবং তোমাদের দ্বীনের অনুসারী ছাড়া আর কাউকেও বিশ্বাস করো না। তাদেরকে বলে দাও, আল্লাহর (নির্দেশিত) পথই একমাত্র পথ; (এবং এটা আল্লাহর নীতি যে) একদিন তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছিল তা-ই অন্য কাউকে দেয়া হবে অথবা অন্য লোকেরা তোমাদের প্রতিপালকের সামনে তোমাদের বিরুদ্ধে পেশ করার জন্য মযবুত প্রমাণ পেয়ে যাবে। বল, ‘কল্যাণ আল্লাহরই হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছে তা দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যশালী ও সর্বজ্ঞ’।
তিনি যাকে ইচ্ছে নিজের দয়ার জন্য খাস করে বেছে নেন এবং আল্লাহ মহা কল্যাণের অধিকারী।
আহলে কিতাবের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে যে, যদি তাদের নিকট স্বর্ণের স্তুপ গচ্ছিত রাখ, তবে তোমাকে তা ফেরত দেবে, পক্ষান্তরে তাদের কেউ কেউ এমন যে, একটি দিনারও যদি তাদের নিকট গচ্ছিত রাখ, তার পেছনে লেগে না থাকলে সে তোমাকে তা ফেরত দেবে না, এটা এজন্য যে, তারা বলে, ‘নিরক্ষরদের প্রতি আমাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই’, বস্তুতঃ তারা জেনে শুনে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যে বলে।
তবে হ্যাঁ, যে ব্যক্তি নিজের ওয়া‘দা পূর্ণ করবে এবং আল্লাহকে ভয় করে চলবে, নিশ্চয় আল্লাহ (এই) মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।
নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখেরাতের কোন অংশই পাবে না এবং আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না, বস্তুতঃ তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
এদের মধ্যে একদল আছে যারা কিতাবকে জিহবা দ্বারা বিকৃত করে যাতে তোমরা তাকে কিতাবের অংশ বলে মনে কর, মূলতঃ তা কিতাবের অংশ নয় এবং তারা বলে, ‘এটা আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ, বস্তুতঃ তা আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ নয়, তারা জেনে শুনে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে।
কোন মানব সন্তানের পক্ষে এটা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, জ্ঞান ও নুবুওয়াত দান করেন, অতঃপর সে লোকেদেরকে বলে, ‘তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার বান্দা হয়ে যাও, বরং (সে বলবে), ‘তোমরা আল্লাহ্ওয়ালা হও; যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দান কর এবং নিজেরাও পাঠ কর’।
সে ব্যক্তি তোমাদেরকে বলবে না যে, তোমরা ফেরেশতাদেরকে এবং নাবীদেরকে মা’বূদরূপে গ্রহণ কর, তোমরা মুসলিম হওয়ার পরও কি সে তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দিতে পারে?
(স্মরণ কর) যখন আল্লাহ নাবীদের নিকট হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব এবং জ্ঞান যা কিছু প্রদান করেছি, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থক কোন রসূল যখন তোমাদের নিকট আসবে, তখন অবশ্য তোমরা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা অঙ্গীকার করলে তো? এবং যে বিষয়ে আমি তোমাদের নিকট হতে অঙ্গীকার নিলাম, তোমরা তা মানলে তো?’ তারা বলল, ‘আমরা অঙ্গীকার করলাম’। আল্লাহ বললেন, ‘তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম’।
অতঃপর যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে তারাই হল ফাসেক।
এরা কি আল্লাহর দ্বীন ছাড়া অন্য দ্বীনের সন্ধান করছে? অথচ আসমান ও যমীনে যা আছে সবই ইচ্ছেয় ও অনিচ্ছেয় তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তাঁরই দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন।
বল, ‘আমরা আল্লাহর উপর এবং আমাদের প্রতি ও ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাঁর বংশধরের প্রতি যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নাবীগণকে তাঁদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা কিছু দেয়া হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছি; আমরা তাঁদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পিত।’
আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবূল করা হবে না এবং আখেরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আল্লাহ কীরূপে সেই সম্প্রদায়কে সুপথ দেখাবেন যারা ঈমান আনার পর, এ রসূলকে সত্য বলে স্বীকার করার পর এবং তাদের নিকট সুস্পষ্ট দলীল আসার পর কুফরী করে? বস্তুতঃ আল্লাহ যালিম কওমকে পথ দেখান না।
এরাই তারা যাদের প্রতিফল এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহর, ফেরেশতাদের এবং সমুদয় মানবের অভিসম্পাত।
তারা ওতেই চিরকাল থাকবে, তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং তাদেরকে বিরামও দেয়া হবে না।
কিন্তু এরপর যারা তাওবাহ করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে তারা ব্যতীত। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনার পর কুফরী করল, অতঃপর তাদের কুফরী বেড়েই চলল, তাদের তাওবাহ কক্ষনো কবুল করা হবে না এবং এ লোকেরাই পথভ্রষ্ট।
নিশ্চয়ই যারা কুফরী করে এবং সেই কাফির অবস্থায়ই মারা যায়, তাদের কেউ পৃথিবী-ভরা স্বর্ণও বিনিময় স্বরূপ প্রদান করতে চাইলে তা তার কাছ থেকে কক্ষণো গ্রহণ করা হবে না। এরাই তারা যাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কক্ষনো পুণ্য লাভ করবে না, যা কিছু তোমরা খরচ কর-নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে খুব ভালভাবেই অবগত।
তাওরাত নাযিলের পূর্বে ইয়াকুব নিজের উপর যা হারাম করেছিল, তাছাড়া সকল খাদ্য বানী ইসরাঈলের জন্য হালাল ছিল। বল, ‘তোমরা তাওরাত নিয়ে এসো, এবং তা পাঠ কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।
এরপরও যারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যারোপ করবে, তারা যালিম।
বল, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন, সুতরাং তোমরা একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের অনুসরণ কর, সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নয়’।
নিঃসন্দেহে প্রথম ঘর যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল, তাতো মক্কা্য়, যা বরকতমন্ডিত এবং সারা জাহানের জন্য পথপ্রদর্শক।
তাতে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে (যেমন) মাক্বামে ইবরাহীম(ইবরাহীমের দাঁড়ানোর জায়গা)। যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে নিরাপদ হবে। আল্লাহর জন্য উক্ত ঘরের হাজ্জ করা লোকেদের উপর আবশ্যক যার সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে এবং যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে, (সে জেনে রাখুক) নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্ব জাহানের মুখাপেক্ষী নন।
বল, ‘হে কিতাবধারীগণ! তোমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে কেন অমান্য করছ? বস্তুতঃ তোমরা যা করছ, আল্লাহ তার সাক্ষী’।
বল, হে কিতাবধারীগণ! যে ব্যক্তি ঈমান এনেছে তাকে কেন আল্লাহর পথে বাধা দিচ্ছ, ওকে বক্র করার পথ খুঁজছ, অথচ তোমরাই (এ পথের সত্যতার) সাক্ষী? এমতাবস্থায় আল্লাহ তোমাদের কার্যাবলী সম্বন্ধে বে-খবর নন।
হে মু’মিনগণ! তোমরা যদি কিতাবীদের মধ্য হতে কোন দলের কথা মেনে নাও, তবে তারা তোমাদের ঈমান আনার পর আবার তোমাদেরকে কাফির বানিয়ে ছাড়বে।
আর তোমরা কেমন করে কুফরী করতে পার যখন তোমাদেরকে আল্লাহর আয়াতসমূহ পড়ে শুনানো হচ্ছে এবং তোমাদের মাঝে তাঁর রসূলও মওজুদ আছেন? যে ব্যক্তি আল্লাহকে সুদৃঢ়ভাবে গ্রহণ করে, নিশ্চয়ই সে সরল পথের দিকে পরিচালিত হবে।
হে মু’মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর যেমনভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত। তোমরা মুসলিম না হয়ে কক্ষনো মরো না।
আল্লাহর রজ্জুকে সমবেতভাবে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নি‘মাত স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু, তিনি তোমাদের অন্তরে প্রীতির সঞ্চার করলেন, ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নি-গহ্বরের প্রান্তে ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে তাত্থেকে রক্ষা করলেন। এভাবে আল্লাহ নিজের নিদর্শনাবলী তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা সঠিক পথ প্রাপ্ত হও।
তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল হোক, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করে, সৎ কাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করে আর এরাই সফলকাম।
তোমরা সেই লোকদের মত হয়ে যেয়ো না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন পৌঁছার পরে বিভক্ত হয়েছে ও মতভেদ করেছে এবং এ শ্রেণীর লোকেদের জন্য আছে মহা শাস্তি।
সে দিন কতক মুখ উজ্জ্বল হবে আর কতক মুখ কালো হবে, যাদের মুখ কালো হবে, (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা কি ঈমান আনার পরও কুফরী করেছিলে? কাজেই নিজেদের কুফরীর জন্য শাস্তি ভোগ করতে থাক।
যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকবে, তারা তাতে চিরকাল থাকবে।
এসব আল্লাহর আয়াত, যা ঠিকভাবে আমি তোমাকে পড়ে শুনাচ্ছি এবং আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতি যুলম করতে চান না।
যা কিছু আসমানে আছে আর যমীনে আছে সব আল্লাহরই এবং যাবতীয় বিষয়াদি আল্লাহর দিকেই ফিরে যাবে।
তোমরাই সর্বোত্তম উম্মাত, মানবজাতির (সর্বাত্মক কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভুত করা হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ কর ও আল্লাহর প্রতি ঈমান রক্ষা করে চল। যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তাহলে নিশ্চয়ই তাদের জন্য ভাল হত, তাদের মধ্যে কেউ কেউ মু’মিন এবং তাদের অধিকাংশই ফাসেক।
সামান্য কষ্ট দেয়া ব্যতীত তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তবে তোমাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে, অতঃপর তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।
আল্লাহর অনুকম্পা ও মানুষের আশ্রয় ছাড়া যেখানেই তারা অবস্থান করুক, সেখানেই তারা হয়েছে লাঞ্ছিত, তারা আল্লাহর গযবে পরিবেষ্টিত এবং তাদের উপর পতিত হয়েছে দারিদ্রের কশাঘাত। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ প্রত্যাখ্যান করত এবং নাবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত, এটা এজন্য যে, তারা অবাধ্যতা এবং সীমালঙ্ঘন করত।
তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের কত লোক এমনও আছে যারা দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে, তারা রাত্রিকালে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে থাকে এবং তারা সাজদাহ করে থাকে।
তারা আল্লাহর ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে, সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করে এবং কল্যাণকর কাজে তৎপর থাকে। বস্তুতঃ তারা পুণ্যবানদের মধ্যে গণ্য।
তারা যা কিছু সৎকাজ করুক কোন কিছুই প্রত্যাখ্যান করা হবে না এবং আল্লাহ মুত্তাকীদের বিষয়ে বিশেষরূপে পরিজ্ঞাত।
যারা কুফরী করে, আল্লাহর নিকটে তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কক্ষনো কোন কাজে আসবে না এবং তারা হচ্ছে অগ্নির অধিবাসী, তারা তাতে চিরকাল থাকবে।
এ পার্থিব জীবনে তারা যা ব্যয় করে তার দৃষ্টান্ত হিমশীতল বাতাসের মত যা নিজেদের প্রতি যুলমকারী সম্প্রদায়ের শস্যক্ষেত্রকে আঘাত করে এবং তাকে নষ্ট করে। মূলতঃ তাদের প্রতি আল্লাহ কোন প্রকার যুলম করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলম করে থাকে।
হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদের লোক ছেড়ে অন্য কাউকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, কারণ তারা তোমাদেরকে নষ্ট করতে ত্রুটি করবে না, তারা কেবল তোমাদের দুর্ভোগ কামনা করে, বস্তুতঃ তাদের মুখেও শত্রুতা প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং তাদের অন্তর যা লুকিয়ে রাখে তা আরও ভয়ঙ্কর, আমি তোমাদের কাছে তাদের লক্ষণগুলো স্পষ্ট করে দিলাম, যদি তোমরা অনুধাবন কর।
অবশ্য তোমরাই সেই লোক যে, তোমরা তাদেরকে মহববত কর, কিন্তু তারা তোমাদের সাথে মহববত রাখে না, উপরন্তু তোমরা সকল কিতাবের প্রতিও বিশ্বাস রাখ এবং যখন তারা তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখন বলে যে, ‘আমরাও ঈমান এনেছি’ এবং যখন তারা একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি গোস্বায় নিজেদের আঙ্গুলের মাথা কামড়াতে থাকে। তাদেরকে বল, ‘তোমরা নিজেদের গোস্বায় মরতে থাক’। বস্তুতঃ অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা খুব ভালভাবেই জানেন।
যদি তোমাদের কল্যাণ হয়, তা তাদেরকে দুঃখ দেয়, আর যদি তোমাদের অকল্যাণ হয়, তাতে তারা আনন্দিত হয়, যদি তোমরা ধৈর্যশীল হও এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না, নিশ্চয় তারা যা কিছু করছে, আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন।
(স্মরণ কর) যখন তুমি সকাল বেলায় তোমার পরিজন হতে বের হয়ে মু’মিনদেরকে যুদ্ধের জন্য জায়গায় জায়গায় মোতায়েন করছিলে, আল্লাহ সবকিছুই শুনেন, সবকিছুই জানেন।।
যখন তোমাদের মধ্যকার দু’দল ভীরুতা প্রকাশ করতে মনস্থ করেছিল, কিন্তু আল্লাহ উভয়ের বন্ধু ছিলেন, মু’মিনদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা।
এবং আল্লাহ তোমাদের হীন অবস্থায় বাদর যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করেছেন, সুতরাং আল্লাহকে ভয় করে চল, যেন তোমরা শোকরগুজার হতে পার।
(স্মরণ কর) যখন তুমি মু’মিনদেরকে বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি এটা যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন সহস্র ফেরেশতা অবতরণপূর্বক তোমাদের সাহায্য করবেন?’
হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর এবং তারা (অর্থাৎ শত্রুরা) মুহূর্তের মধ্যে এখানে তোমাদের উপর এসে পড়ে, তাহলে তোমাদের প্রতিপালক বিশেষভাবে চিহ্নিত পাঁচ সহস্র ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন।
এটা আল্লাহ কেবলমাত্র তোমাদের সুসংবাদের জন্য এবং তা দ্বারা তোমাদের চিত্ত-প্রশান্তির জন্য করেছেন, মূলতঃ সাহায্য তো শুধু আল্লাহরই নিকট হতে, যিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।
যাতে তিনি কাফিরদের দলবিশেষকে ধ্বংস করে দেন কিংবা লাঞ্ছিত করেন, ফলে তারা নিরাশ হয়ে প্রত্যাবর্তন করে।
আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন- এ ব্যাপারে তোমার কিছু করার নেই। কেননা তারা হচ্ছে যালিম।
আকাশসমূহে ও যমীনে যা কিছুই আছে সেসব আল্লাহরই, তিনি যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছে শাস্তি প্রদান করেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
হে মু’মিনগণ! তোমরা সুদ খেও না ক্রমবর্ধিতভাবে, আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
ভয় কর সেই আগুনকে, যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
আল্লাহর ও রসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা কৃপাপ্রাপ্ত হতে পার।
তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে ও সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।
যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।
যারা কোন পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহ ব্যতীত গুনাহসমূহের ক্ষমাকারী কেই বা আছে এবং তারা জেনে শুনে নিজেদের (পাপ) কাজের পুনরাবৃত্তি করে না।
এরাই তারা যাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে ক্ষমা এবং এমন এক জান্নাত যার নিম্নে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তার স্থায়ী অধিবাসী এবং সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কতই না উত্তম!
তোমাদের পূর্বেও অনেক সম্প্রদায় গত হয়েছে, তোমরা দুনিয়া পর্যটন কর, তারপর দেখ, যারা মিথ্যা ব’লে অমান্য করেছিল তাদের পরিণাম কী দাঁড়িয়েছে।
এটা হচ্ছে মানুষের জন্য সুস্পষ্ট বর্ণনা এবং মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত ও নাসীহাত।
তোমরা হীনবল ও দুঃখিত হয়ো না, বস্তুতঃ তোমরাই জয়ী থাকবে যদি তোমরা মু’মিন হও।
যদি তোমাদেরকে আঘাত স্পর্শ করে, অনুরূপ আঘাত তো অপর পক্ষকেও স্পর্শ করেছিল। (জয়-পরাজয়ের) এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে আবর্তিত করে থাকি যাতে আল্লাহ মু’মিনদেরকে চিনে নিতে পারেন এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন, বস্তুতঃ আল্লাহ যালিমদেরকে ভালবাসেন না।
এবং (এ জন্যেও) যেন আল্লাহ মু’মিনদেরকে সংশোধন করেন ও কাফিরদের নিশ্চিহ্ন করেন।
তোমরা কি ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ এখন পর্যন্তও পরখ করেননি তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে আর কারা ধৈর্যশীল।
(শাহাদাতের) মৃত্যুর সাক্ষাৎ লাভের পূর্বে তোমরা তা কামনা করতে, এখন তো তোমরা তা দিব্যদৃষ্টিতে দেখলে।
মুহাম্মাদ হচ্ছে একজন রসূল মাত্র, তাঁর পূর্বে আরও অনেক রসূল গত হয়েছে; কাজেই যদি সে মারা যায় কিংবা নিহত হয়, তবে কি তোমরা উল্টাদিকে ঘুরে দাঁড়াবে? এবং যে ব্যক্তি উল্টাদিকে ফিরে দাঁড়ায় সে আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না এবং আল্লাহ কৃতজ্ঞদেরকে অতিশীঘ্র বিনিময় প্রদান করবেন।
কোন জীবই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না, তার মেয়াদ নির্ধারিত। যে ব্যক্তি পার্থিব ফল চায়, আমি তাত্থেকে তাকে দেই, আর যে ব্যক্তি আখেরাতের ফল চায়, আমি তাকে তাত্থেকে দেই এবং কৃতজ্ঞদেরকে আমি শীঘ্রই বিনিময় প্রদান করব।
কত নাবী যুদ্ধ করেছে, তাদের সাথে ছিল বহু লোক, তখন তারা আল্লাহর পথে তাদের উপর সংঘটিত বিপদের জন্য হীনবল হয়নি, দুর্বল হয়নি, দুর্বল, অপারগ হয়নি, বস্তুতঃ আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালবাসেন।
তাদের মুখ হতে কেবল এ কথাই বেরিয়েছিল- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের অপরাধগুলো এবং আমাদের কাজ-কর্মে বাড়াবাড়িগুলোকে তুমি ক্ষমা করে দাও, আমাদেরকে দৃঢ়পদ রেখ এবং কাফিরদলের উপর আমাদেরকে সাহায্য কর।’
সুতরাং আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব সুফল প্রদান করলেন আর পরকালীন উৎকৃষ্ট সুফল। আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।
হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর তাহলে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদ্দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, তখন তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
বরং আল্লাহ্ই তোমাদের অভিভাবক এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।
অতিসত্বরই আমি কাফিরদের অন্তরে ভয় সঞ্চার করব, কারণ তারা আল্লাহর শরীক গ্রহণ করেছে যার স্বপক্ষে তিনি কোনও সনদ অবতীর্ণ করেননি, তাদের নিবাস হবে জাহান্নাম এবং যালিমদের নিবাস কতই না জঘন্য!
(উহূদের রণক্ষেত্রে) আল্লাহ তোমাদেরকে স্বীয় ওয়া‘দা সঠিকরূপে দেখালেন, যখন তোমরা আল্লাহর নির্দেশে কাফিরদেরকে নিপাত করছিলে, অতঃপর যখন তোমরা নিজেরাই (পার্থিব লাভের বশে) দুর্বল হয়ে গেলে এবং (নেতার) হুকুম সম্বন্ধে মতভেদ করলে এবং তোমাদেরকে তোমাদের আকাঙ্ক্ষিত বস্তু দেখানোর পর তোমরা অবাধ্য হলে, তোমাদের কেউ কেউ দুনিয়ার প্রত্যাশী হলে এবং কেউ কেউ পরকাল চাইলে, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে শত্রুদের হতে ফিরিয়ে দিলেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, আল্লাহ অবশ্য তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন, বস্তুতঃ আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল।
(স্মরণ কর) যখন তোমরা উঁচু জমির দিকে উঠছিলে এবং কারও দিকে ফিরে তাকানোর মত হুঁশটুকু তোমাদের ছিল না এবং রসূল তোমাদের পশ্চাতে থেকে তোমাদেরকে ডাকছিল। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্টের উপর কষ্ট প্রদান করলেন, যাতে তোমরা যা হারিয়েছ অথবা তোমাদের উপর যে বিপদ এসেছে (তার কারণ উপলব্ধি করার পর ভবিষ্যতে) তার জন্য দুঃখিত না হও, বস্তুতঃ তোমরা যা-ই কর আল্লাহ সে ব্যাপারে বিশেষভাবে অবহিত।
অতঃপর কষ্টের পর আল্লাহ তোমাদের প্রতি শান্তি-তন্দ্রা প্রেরণ করলেন, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করল এবং অন্যদল মূর্খের মতো আল্লাহর প্রতি কুধারণা পোষণ করতঃ নিজেরাই নিজেদের জীবনকে উদ্বেগাকুল করে বলল, কাজ-কর্মের ব্যাপারে (সিদ্ধান্ত গ্রহণের) আমাদের কিছুমাত্র অধিকার আছে কি? বল, ‘সমস্তই আল্লাহর নিরঙ্কুশ অধিকারভুক্ত’। তারা এমন সব কথা অন্তরে পোষণ করে- যা তোমার কাছে প্রকাশ করে না। তারা বলে, ‘যদি মতামত প্রদানের অধিকার আমাদের কিছুমাত্রও থাকত, তাহলে আমরা এ স্থলে নিহত হতাম না’। বলে দাও, ‘যদি তোমরা তোমাদের ঘরেও থাকতে, তথাপি যাদের ভাগ্যে মৃত্যু লেখা ছিল, তারা তাদের এ মৃত্যুশয্যার পানে বের হয়ে পড়ত’। এবং এজন্যও যে আল্লাহ তোমাদের অন্তরের ভেতরের বিষয়গুলো পরীক্ষা করেন এবং তোমাদের অন্তরস্থ বিষয়গুলোকে পরিষ্কার করেন, বস্তুতঃ আল্লাহ সকলের অন্তরের কথা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত।
দু’দল পরস্পর সম্মুখীন হওয়ার দিন তোমাদের মধ্যে যারা পলায়নপর হয়েছিল, তোমাদের কোন কোন অতীত কার্যকলাপের জন্য শয়ত্বান তাদের পদস্খলন ঘটিয়েছিল এবং নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করেছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, অতি সহনশীল।
হে মু’মিনগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা কুফরী করে এবং তাদের ভাই-বন্ধুগণ যখন বিদেশে সফর করে কিংবা কোথাও যুদ্ধে লিপ্ত হয় তাদের সম্বন্ধে বলে, ‘তারা আমাদের কাছে থাকলে মরত না, নিহতও হত না’। ফলে আল্লাহ এটিকে তাদের মনের অনুতাপে পরিণত করে দেন, বস্তুতঃ আল্লাহ্ই জীবিত করেন ও মৃত্যুদান করেন আর তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মৃত্যুবরণ কর, তবে আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা অতি উত্তম তারা যা সঞ্চয় করে তার চেয়ে।
তোমরা মারা গেলে বা নিহত হলে অবশ্যই আল্লাহর নিকট তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।
সুতরাং আল্লাহর পরম অনুগ্রহ যে তুমি তাদের উপর দয়ার্দ্র রয়েছ, এবং যদি তুমি রূঢ় মেজাজ ও কঠিন হৃদয় হতে তবে অবশ্যই তারা তোমার নিকট হতে সরে যেত। সুতরাং তাদের দোষ ক্ষমা কর এবং আল্লাহর কাছে তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাও এবং কাজ-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ কর, অতঃপর যখন (কোন ব্যাপারে) সংকল্পবদ্ধ হও, তখন আল্লাহরই প্রতি ভরসা কর; নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীদেরকে পছন্দ করেন।
যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন, তবে তোমাদের উপর কেউই বিজয়ী হতে পারবে না এবং যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, সে অবস্থায় এমন কে আছে যে, তোমাদেরকে সাহায্য করবে? মু’মিনদের আল্লাহর প্রতি নির্ভর করাই উচিত।
কোন নাবী খিয়ানাত করতে পারে না, যে ব্যক্তি খিয়ানাত করবে, সে খিয়ানাতকৃত বস্তুসহ ক্বিয়ামাতের দিন উপস্থিত হবে, অতঃপর প্রত্যেককে যা সে অর্জন করেছে তা পুরোপুরি দেয়া হবে, কারও প্রতি কোন প্রকার যুলম করা হবে না।
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসরণ করে, সে কি আল্লাহর আক্রোশে পতিত লোকের ন্যায় হতে পারে? তার নিবাস হল জাহান্নাম, আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল!
আল্লাহর নিকট তাদের বিভিন্ন মর্যাদা রয়েছে, বস্তুতঃ তারা যা কিছুই করছে, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন, যখন তাদের নিকট তাদের নিজস্ব একজনকে রসূল করে পাঠিয়েছেন, সে তাদেরকে আল্লাহর আয়াত পড়ে শুনাচ্ছে, তাদেরকে পরিশোধন করছে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত (সুন্নাহ) শিক্ষা দিচ্ছে, যদিও তারা পূর্বে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল।
কী ব্যাপার! তোমাদের উপর যখন বিপদ এসেছে অথচ তোমরা তো (বদর যুদ্ধে তোমাদের শত্রুদের) এটা অপেক্ষা দ্বিগুণ বিপদ ঘটিয়েছিলে, এখন তোমরা বলছ, ‘এটা কোথেকে আসল’? (তাদেরকে) বল, ‘ওটা তোমাদের নিজেদের নিকট থেকেই এসেছে’, নিশ্চয় আল্লাহ সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।
দু’দল পরস্পরের সম্মুখীন হওয়ার দিন যে বিপদ পৌঁছেছিল, তা আল্লাহর হুকুমে ঘটেছিল, এর উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত মু’মিনদেরকে জেনে নেয়া।
আর মুনাফিকদেরকেও জেনে নেয়া। তাদেরকে বলা হয়েছিল; এসো, ‘আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর, কিংবা (কমপক্ষে) নিজেদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা কর’। তখন তারা বলল, ‘যদি আমরা জানতাম যুদ্ধ হবে, তাহলে অবশ্যই তোমাদের অনুসরণ করতাম’। তারা ঐ দিন ঈমানের চেয়ে কুফরীরই নিকটতম ছিল, তারা মুখে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই, যা কিছু তারা গোপন করে আল্লাহ তা বিশেষরূপে জ্ঞাত আছেন।
যারা বসে থেকে নিজেদের ভাইদের সম্বন্ধে বলতে লাগল, আমাদের কথামত চললে তারা নিহত হত না। বল, তোমরা সত্যবাদী হলে তোমাদের নিজেদের উপর থেকে মরণকে হটিয়ে দাও।
যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত ভেব না, বরং তারা জীবিত, তাদের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে থেকে তারা রিযকপ্রাপ্ত হচ্ছে।
আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তা লাভ করে তারা আনন্দিত আর যে সব ঈমানদার লোক তাদের পেছনে (পৃথিবীতে) রয়ে গেছে, এখনও তাদের সাথে এসে মিলিত হয়নি, তাদের কোন ভয় ও চিন্তে নেই জেনে তারা আনন্দিত।
আল্লাহর নি‘মাত এবং অনুগ্রহের কারণে তারা আনন্দ প্রকাশ করে আর এটা জেনে যে, আল্লাহ মু’মিনদের সাওয়াব বিনষ্ট করেন না।
আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পরও যারা আল্লাহ এবং রসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে তাদের মধ্যে যারা সৎকাজ করে ও তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য রয়েছে মহা প্রতিদান।
যাদেরকে লোকে খবর দিয়েছিল যে, একটা বড় বাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে জড় হচ্ছে, কাজেই তাদেরকে ভয় কর। তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে দিল এবং তারা বলল, ‘আমাদের জন্যে আল্লাহ্ই যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক!’
অতঃপর তারা আল্লাহর নি‘মাত ও অনুগ্রহসহ ফিরে আসল, কোনও প্রকার অনিষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেনি, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল এবং আল্লাহ মহাকল্যাণময়।
এ লোকেরা হচ্ছে শয়ত্বান; তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়, তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।
যারা কুফরীর দিকে দ্রুত ধাবমান তারা যেন তোমাকে মর্মপীড়া না দেয়। তারা কক্ষনো আল্লাহর কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না। পরকালে কোন অংশই আল্লাহ তাদেরকে দিতে ইচ্ছে করেন না, তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি।
যারা ঈমানের বিনিময়ে কুফরী ক্রয় করেছে, তারা কক্ষনো আল্লাহর কিছুমাত্র অনিষ্ট করতে পারবে না, তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
কাফিরগণ যেন কিছুতেই এ ধারণা পোষণ না করে যে, তাদেরকে আমি যে অবকাশ দিয়েছি তা তাদের জন্য মঙ্গলজনক; আমি তাদেরকে শুধু এজন্য অবকাশ দেই যে, যেন তাদের পাপের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাদের জন্য আছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
অসৎকে সৎ থেকে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় আছ, আল্লাহ মু’মিনদেরকে সে অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারেন না এবং আল্লাহ তোমাদেরকে গায়িবের বিধান জ্ঞাত করেন না, তবে আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছে বেছে নেন, কাজেই তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমান আন। যদি তোমরা ঈমান আন আর তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তোমাদের জন্য আছে মহাপুরস্কার।
আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন মনে না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য (খুবই) অকল্যাণকর, তারা যাতে কৃপণতা করেছে, সত্বর ক্বিয়ামাতের দিন তারই বেড়ি তাদের গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। আসমান ও যমীনের স্বত্বাধিকার কেবল আল্লাহরই। তোমরা যা কিছুই করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত।
আল্লাহ অবশ্যই তাদের উক্তি শ্রবণ করেছেন যারা বলে, ‘আল্লাহ দরিদ্র এবং আমরা ধনী’, তারা যা বলে তা আমি অবশ্যই লিপিবদ্ধ করে রাখব এবং (তাদের) অন্যায়ভাবে নাবীগণকে হত্যা করার বিষয়টিও (লিপিবদ্ধ করে রাখব) এবং আমি বলব- ‘জাহান্নামের দহন যন্ত্রণা ভোগ কর’।
এটা তোমাদের আগেই পাঠানো কাজের বিনিময়, কারণ আল্লাহ স্বীয় বান্দাগণের প্রতি কোন প্রকার যুলম করেন না।
যারা ব’লে থাকে যে, ‘আল্লাহ আমাদের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছেন, যেন আমরা আগুনে গ্রাস করে এমন কোন কুরবানী আমাদের সামনে না দেখানো পর্যন্ত কোন রসূলের প্রতি ঈমান না আনি’। বল, ‘আমার পূর্বে বহু রসূল বহু প্রমাণসহ তোমাদের নিকট এসেছিল এবং তোমাদের কথিত সেই মু’জিযা নিয়েও (এসেছিল)। যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে কেন তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছিলে?’
তারপরও যদি কাফিরগণ তোমাকে অস্বীকার করে, তবে তোমার পূর্বেও রসূলগণকে অস্বীকার করা হয়েছিল যারা স্পষ্ট নিদর্শন, অনেক সহীফা এবং দীপ্তিমান কিতাব নিয়ে এসেছিল।
প্রতিটি জীবন মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে পূর্ণমাত্রায় বিনিময় দেয়া হবে। যে ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করা হল এবং জান্নাতে দাখিল করা হল, অবশ্যই সে ব্যক্তি সফলকাম হল, কেননা পার্থিব জীবন ছলনার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়।
অবশ্যই তোমরা তোমাদের ধনের ও জানের ব্যাপারে পরীক্ষিত হবে এবং তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের আগের কিতাবধারীদের ও মুশরিকদের নিকট হতে দুঃখজনক অনেক কথা শুনবে এবং তোমরা যদি ধৈর্যধারণ কর আর তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে অবশ্যই তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ।
(স্মরণ কর) আল্লাহ আহলে কিতাবদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন- তোমরা অবশ্যই তা (অর্থাৎ কিতাব) মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে আর তা গোপন করবে না, কিন্তু তারা তা অগ্রাহ্য করল এবং সামান্য মূল্যে বিক্রি করল, তারা যা ক্রয় করল সে বস্তু কতই না মন্দ!
তোমরা এ সব লোককে আযাব থেকে সুরক্ষিত মনে করো না যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত এবং এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে চায় মূলতঃ যা তারা করেনি, তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
বস্তুতঃ আসমান ও যমীনে আছে আল্লাহরই রাজত্ব এবং আল্লাহ সকল জিনিসের উপর ক্ষমতাবান।
নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য বহু নিদর্শন আছে।
যারা আল্লাহকে দন্ডায়মান, উপবিষ্ট এবং শায়িত অবস্থায় স্মরণ করে থাকে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তা করে (ও বলে) : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সুতরাং আমাদেরকে অগ্নির শাস্তি হতে রক্ষা কর।
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যাকে আগুনে নিক্ষেপ করবে, তাকে অবশ্যই তুমি অপমান করবে আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা একজন ঘোষণাকারীকে ঈমানের ঘোষণা করতে শুনেছি যে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনো’। সে অনুযায়ী আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের গুনাহ্গুলো ক্ষমা কর এবং আমাদের থেকে আমাদের মন্দ কাজগুলো বিদূরিত কর আর নেক বান্দাদের সঙ্গে শামিল করে আমাদের মৃত্যু ঘটাও।
‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি স্বীয় রসূলদের মারফত আমাদেরকে যেসব বস্তুর ওয়াদা শুনিয়েছ, তা আমাদেরকে দান কর এবং ক্বিয়ামাতের দিন আমাদেরকে লাঞ্ছিত করো না, নিশ্চয়ই তুমি ওয়া‘দা খেলাফ কর না।’
তখন তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে পুরুষ হোক কিংবা নারীই হোক কোন কর্মীরই কর্মফল আমি নষ্ট করি না, তোমরা একে অপরের অংশ। সুতরাং যারা হিজরাত করবে এবং স্বীয় গৃহ হতে বিতাড়িত হবে ও আমার পথে নির্যাতিত হবে, যুদ্ধ করবে ও নিহত হবে, নিশ্চয় আমি তাদের গুনাহসমূহ দূর করে দেব এবং নিশ্চয়ই তাদেরকে এমন জান্নাতে দাখিল করবো, যার নীচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নদ-নদী, আল্লাহর নিকট হতে পুরস্কার হিসেবে, বস্তুতঃ আল্লাহর নিকটেই উত্তম বিনিময়।
দেশে দেশে কাফিরদের সদম্ভ পদচারণা তোমাকে যেন বিভ্রান্ত না করে।
সামান্য ভোগ, তারপর জাহান্নাম তাদের আবাস, আর তা কতই না নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!
কিন্তু যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য আছে জান্নাত যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে, এ হল আল্লাহর নিকট হতে আতিথ্য আর আল্লাহর নিকট যা আছে, তা সৎকর্মপরায়ণদের জন্য অতি উত্তম।
আহলে কিতাবদের মধ্যেকার কিছু লোক নিঃসন্দেহে এমনও আছে, যারা আল্লাহর উপর এবং তোমাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবের এবং তাদের প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান রাখে, তারা আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত, তারা আল্লাহর আয়াতকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রয় করে না, এরাই তারা যাদের জন্য তাদের কর্মফল নির্ধারিত রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট, আল্লাহ হিসেব গ্রহণে ত্বরিতগতি।
হে মু’মিনগণ! ধৈর্য অবলম্বন কর, দৃঢ়তা প্রদর্শন কর, নিজেদের প্রতিরক্ষাকল্পে পারস্পরিক বন্ধন মজবুত কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।