ত্ব-সীন-মীম।
এগুলো সুস্পষ্ট (বা সুস্পষ্টকারী) কিতাবের আয়াত।
তুমি হয়ত এ দুঃখে তোমার প্রাণনাশ করবে যে, তারা মু’মিন হচ্ছে না।
আমি ইচ্ছে করলে তাদের কাছে আসমান থেকে এমন নিদর্শন পাঠাতাম যে তার সামনে তাদের মাথা নত হয়ে যেত (অর্থাৎ তারা ঈমান আনতে বাধ্য হত)।
তাদের কাছে যখনই দয়াময় আল্লাহর পক্ষ হতে নতুন কোন নসীহত আসে তখনই তারা তাত্থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
তারা (আল্লাহর বাণীকে) অস্বীকারই করেছে, শীঘ্রই তাদের কাছে তার সত্য উদঘাটিত হবে যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।
তারা কি যমীনের দিকে চেয়ে দেখে না, আমি তাতে সব ধরনের উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ পয়দা করেছি।
অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে (আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা ক’রে ঈমান আনার জন্য), কিন্তু তাদের অধিকাংশই ঈমান আনে না।
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক মহা পরাক্রমশালী, অতি দয়ালু।
স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক মূসাকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘তুমি যালিম সম্প্রদায়ের কাছে যাও,
ফেরাউনের সম্প্রদায়ের কাছে। তারা কি ভয় করে না?
সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার ভয় হচ্ছে তারা আমাকে মিথ্যে মনে ক’রে প্রত্যাখ্যান করবে।
আর আমার অন্তর সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, আমার জিহ্বা সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে না। কাজেই আপনি হারূনের প্রতি রিসালাত দিন।
তদুপরি আমার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগও তাদের আছে, কাজেই আমার ভয় হচ্ছে তারা আমাকে হত্যা করবে।’
আল্লাহ বললেন, ‘কক্ষনো না, তোমরা দু’জনে আমার (দেয়া) নিদর্শন নিয়ে যাও, আমি তোমাদের সঙ্গে থেকে সব কিছু শুনতে থাকব।
কাজেই তোমরা দু’জনে ফেরাউনের কাছে যাও আর গিয়ে বল যে, আমরা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের প্রেরিত রসূল।
বানী ইসরাঈলকে আমাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দাও।’
ফেরাউন বলল, ‘আমরা কি তোমাকে শিশুকালে আমাদের মধ্যে লালন পালন করিনি? আর তুমি কি তোমার জীবনের কতকগুলো বছর আমাদের মাঝে কাটাওনি?
তুমি তোমার কর্ম যা করার করেছ (আমাদের একজন লোককে হত্যা ক’রে), তুমি বড় অকৃতজ্ঞ।’
মূসা বলল : ‘আমি তো তা করেছিলাম সে সময় যখন আমি ছিলাম (সঠিক পথ সম্পর্কে) অজ্ঞ।
অতঃপর তোমাদের ভয়ে ভীত হয়ে আমি তোমাদের থেকে পালিয়ে গেলাম। অতঃপর আমার রবব আমাকে প্রজ্ঞা দান করলেন, আর আমাকে করলেন রসূলদের একজন।
তুমি আমার প্রতি তোমার যে অনুগ্রহের খোঁটা দিচ্ছ তাতো এই যে, তুমি বানী ইসরাঈলকে দাসে পরিণত করেছ।’
ফেরাউন বলল : ‘বিশ্বজগতের প্রতিপালক আবার কী?’
মূসা বলল : ‘(যিনি) আসমান ও যমীন ও এ দু’য়ের মাঝে যা কিছু আছে সব কিছুর প্রতিপালক- যদি তোমরা নিঃসন্দেহে বিশ্বাসী হও।
ফেরাউন তার চারপাশের লোকেদেরকে বলল- ‘তোমরা শুনছ তো?’
মূসা বলল : ‘(তিনি) তোমাদের প্রতিপালক ও শুরু থেকে পূর্ববর্তী তোমাদের বাপ-দাদাদেরও প্রতিপালক।’
(ফিরআউন) বলল: ‘তোমাদের রসূল যে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছে সে নিশ্চিতই পাগল।’
(মূসা) বললঃ ‘(তিনিই) পূর্ব ও পশ্চিমের প্রতিপালক, আর এ উভয় দিকের মাঝে যা আছে তারও- যদি তোমাদের বুদ্ধিসুদ্ধি থাকে।’
(ফেরাউন) বলল : ‘যদি তুমি আমাকে বাদ দিয়ে (অন্য কিছুকে) ইলাহ হিসেবে গ্রহণ কর, তাহলে আমি তোমাকে অবশ্য অবশ্যই কারারুদ্ধ করব।’
(মূসা) বলল : ‘আমি যদি তোমার কাছে কোন স্পষ্ট জিনিস নিয়ে আসি তবুও?
(ফেরাউন) বলল : ‘তাহলে তা আনো, যদি তুমি সত্যবাদী হও।’
তখন মূসা তার লাঠি ছুঁড়ে দিল আর সহসাই তা স্পষ্ট এক অজগর হয়ে গেল।
আর মূসা (বগলের নীচ দিয়ে) নিজের হাত টেনে বের করল, আর তা দর্শকদের সামনে ঝকমক করতে লাগল।
ফেরাউন তার চারপাশের প্রধানদের বলল : ‘সে অবশ্যই এক দক্ষ যাদুকর।
যাদুর বলে সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এখন বল তোমাদের নির্দেশ কী?’
তারা বলল : ‘তাকে ও তার ভাইকে (কিছু সময়) অপেক্ষায় ফেলে রাখুন আর জড়ো করার জন্য ঘোষকদেরকে নগরে নগরে পাঠিয়ে দিন।
তারা আপনার কাছে প্রত্যেকটি অভিজ্ঞ যাদুকরকে নিয়ে আসবে।’
কাজেই যাদুকরদেরকে একত্রিত করা হল একটি নির্দিষ্ট দিন ক্ষণের জন্য যা ছিল সুবিদিত।
আর জনগণকে বলা হল- ‘তোমরা কি সম্মিলিত হবে?
যাতে আমরা যাদুকরদের (এবং তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ফেরাউনের) দীন অনুসরণ করতে পারি যদি তারা বিজয়ী হয়।
যাদুকররা যখন আসলো, তারা ফেরাউনকে বলল : ‘আমরা জয়ী হলে আমাদেরকে পুরস্কার দেয়া হবে তো?’
ফেরাউন বলল- ‘হাঁ, তখন তোমরা অবশ্যই আমার নৈকট্যলাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’
মূসা তাদেরকে বলল- ‘নিক্ষেপ কর যা তোমরা নিক্ষেপ করবে।’
তখন তারা তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো নিক্ষেপ করল আর তারা বলল- ‘ফেরাউনের ইযযতের শপথ! আমরা অবশ্যই জয়ী হব।’
অতঃপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করল। হঠাৎ তা তাদের অলীক কীর্তিগুলোকে গিলতে লাগল।
তখন যাদুকররা সিজদায় লুটিয়ে পড়ল।
তারা বলল- ‘আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম রাব্বুল ‘আলামীনের প্রতি,
যিনি মূসা ও হারুনের প্রতিপালক।’
ফেরাউন বলল- ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা তাতে বিশ্বাস আনলে? নিশ্চয়ই সে তোমাদের ওস্তাদ যে তোমাদেরকে যাদু শিখিয়েছে। শীঘ্রই তোমরা (এর পরিণাম) জানতে পারবে। আমি অবশ্য অবশ্যই তোমাদের হাত-পাগুলোকে বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব আর তোমাদের সব্বাইকে অবশ্য অবশ্যই ‘শূলে চড়াব।
তারা বলল- কোনই ক্ষতি নেই, আমরা আমাদের প্রতিপালকের পানে প্রত্যাবর্তন করব।
আমাদের একমাত্র আশা এই যে, আমাদের প্রতিপালক আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করবেন, কারণ আমরা বিশ্বাস স্থাপনকারীদের মধ্যে প্রথম।’
আমি মূসাকে ওহীযোগে নির্দেশ দিলাম আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাত্রিকালে বের হয়ে যাও, নিশ্চয়ই তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে।
অতঃপর ফেরাউন শহরে নগরে সংগ্রাহক পাঠিয়ে দিল।
(এই ব’লে যে) এরা (বানী ইসরাঈলরা) ক্ষুদ্র একটি দল।
তারা আমাদেরকে অবশ্যই ক্রোধান্বিত করেছে।
আর আমরা অবশ্যই সদা সতর্ক একটি দল।
এভাবে আমি ফেরাউন গোষ্ঠীকে (তাদের নিজেদেরই) উদ্যানরাজি আর ঝর্ণাসমূহ থেকে বহিস্কার করলাম।
আর ধনভন্ডারসমূহ ও সম্মানজনক অবস্থান থেকে।
এভাবেই ঘটেছিল, আমি বানী ইসরাঈলকে এসব কিছুর উত্তরাধিকারী করে দিয়েছিলাম।
কাজেই তারা (অর্থাৎ ফেরাউন গোষ্ঠী) সূর্যোদয়কালে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল।
যখন দু‘দল পরস্পরকে দেখল তখন মূসার সঙ্গীরা বলল- ‘আমরা তো ধরা পড়েই গেলাম।’
মূসা বলল- ‘কক্ষনো না, আমার রব আমার সঙ্গে আছেন, শীঘ্রই তিনি আমাকে পথ নির্দেশ করবেন।
তখন আমি মূসার প্রতি ওয়াহী করলাম- ‘তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত কর।’ ফলে তা বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক ভাগ সুবিশাল পর্বতের ন্যায় হয়ে গেল।
আমি সেখানে অপর দলটিকে পৌছে দিলাম।
আর মূসা ও তার সঙ্গী সবাইকে উদ্ধার করলাম।
অতঃপর অপর দলটিকে ডুবিয়ে মারলাম।
এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।
তোমার পালনকর্তা অবশ্যই পরাক্রমশালী, বড়ই দয়ালু।
ওদেরকে ইবরাহীমের বৃত্তান্ত শুনিয়ে দাও।
যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলেছিল- ‘তোমরা কিসের ইবাদত কর?’
তারা বলেছিল- ‘আমরা মূর্তির পূজা করি, আর আমরা সদা সর্বদা তাদেরকে আঁকড়ে থাকি।’
ইবরাহীম বলল- ‘তোমরা যখন (তাদেরকে) ডাক তখন কি তারা তোমাদের কথা শোনে?
কিংবা তোমাদের উপকার করে অথবা অপকার?’
তারা বলল- ‘না তবে আমরা আমাদের পিতৃদেরকে এরকম করতে দেখেছি।’
সে বলল-তোমরা কি ভেবে দেখেছ তোমরা কিসের পূজা করে যাচ্ছ?
তোমরা আর তোমাদের আগের পিতৃপুরুষরা?
তারা সবাই আমার শত্রু, বিশ্বজগতের পালনকর্তা ছাড়া।
তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তিনিই আমাকে পথ দেখান।
আর তিনিই আমাকে খাওয়ান ও পান করান।
আর আমি যখন পীড়িত হই তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য করেন।
যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, পুনরায় আমাকে জীবিত করবেন।
আর যিনি, আমি আশা করি- কিয়ামাতের দিন আমার দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেবেন।
হে আমার পালনকর্তা! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অর্ন্তভুক্ত কর।
এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী কর।
এবং আমাকে নি‘য়ামাতপূর্ণ জান্নাতের উত্তরাধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর।
আর তুমি আমার পিতাকে ক্ষমা কর, তিনি তো গুমরাহদের অর্ন্তভুক্ত।
এবং পুনরুত্থান দিবসে আমাকে অপমানিত করো না।
যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি কোন কাজে আসবে না।
কেবল (সাফল্য লাভ করবে) সে ব্যক্তি যে বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আল্লাহর নিকট আসবে।
আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের নিকটবর্তী করা হবে।
এবং পথভ্রষ্টদের সম্মুখে জাহান্নামকে উন্মোচিত করা হবে।
আর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যার ‘ইবাদাত করতে তারা কোথায়
আল্লাহকে বাদ দিয়ে? তারা কি তোমাদের সাহায্য করতে পারে কিংবা তাদের নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারে?
অতঃপর তাদেরকে ও পথভ্রষ্টদেরকে জাহান্নামে মুখের ভরে নিক্ষেপ করা হবে।
আর ইবলীসের দলবল সবাইকে।
সেখানে তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়ে বলবে,
‘আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্য স্পষ্ট গুমরাহীতে ছিলাম।
যখন আমরা তোমাদেরকে সর্বজগতের পালনকর্তার সমকক্ষ স্থির করতাম।
অপরাধীরাই আমাদেরকে গোমরাহ্ করেছিল।
কাজেই আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই।
একজন অন্তরঙ্গ বন্ধুও নেই।
আমাদের যদি একটিবার পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ হত, তাহলে আমরা মু’মিনদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যেতাম।
এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই ঈমান আনে না।
তোমার প্রতিপালক, তিনি অবশ্যই মহা পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
নূহের কওম রসুলগণকে মিথ্যে ব’লে প্রত্যাখান করেছিল।
যখন তাদের ভ্রাতা নূহ তাদেরকে বলেছিল- ‘তোমরা কি ভয় করবে না (আল্লাহকে)?
আমি তোমাদের জন্য (প্রেরিত) বিশ্বস্ত রাসুল।
কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমার অনুসরণ কর।
আমি তার জন্য তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান একমাত্র বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছেই আছে।’
কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর।
তারা বলল- ‘আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস করব যখন তোমার অনুসরণ করছে একেবারে নিম্নশ্রেণীর লোকেরা।’
নূহ বলল- ‘তারা কী করত সেটা আমার জানা নেই।
তাদের হিসাব নেয়া তো আমার প্রতিপালকের কাজ, যদি তোমরা বুঝতে!
মু’মিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়।
আমি তো শুধু একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী।’
তারা বলল- ‘হে নূহ! তুমি যদি বিরত না হও, তাহলে তুমি নিশ্চিতই প্রস্তরাঘাতে নিহত হবে।’
নূহ বলল- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় আমাকে প্রত্যাখান করছে।
কাজেই তুমি আমার ও তাদের মধ্যে ফয়সালা ক’রে দাও, আর আমাকে ও আমার সঙ্গী মু’মিনদেরকে ক্ষমা কর।’
অতঃপর আমি তাকে ও তার সঙ্গে যারা ছিল তাদেরকে বোঝাই নৌযানে রক্ষা করলাম।
তারপর অবশিষ্ট সবাইকে ডুবিয়ে দিলাম।
অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।
তোমার প্রতিপালক, অবশ্যই তিনি প্রবল পরাক্রান্ত, পরম দয়ালু।
‘আদ সম্প্রদায় রসূলগণকে মিথ্যে সাব্যস্ত করেছিল।
যখন তাদের ভাই হূদ তাদেরকে বলল- ‘তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না?
আমি তোমাদের জন্য (প্রেরিত) এক বিশ্বস্ত রসুল।
কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে মান্য কর।
আর এ জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, আমার প্রতিদান আছে কেবল বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট।
তোমরা কি প্রতিটি উচ্চস্থানে অনর্থক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছ?
আর বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছ. যেন তোমরা চিরদিন থাকবে?
আর যখন তোমরা (দুর্বল শ্রেণীর লোকদের উপর) আঘাত হান, তখন আঘাত হান নিষ্ঠুর মালিকের মত।
কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে মান্য কর।
ভয় কর তাঁকে যিনি তোমাদেরকে যাবতীয় বস্তু দান করেছেন যা তোমাদের জানা আছে।
যিনি তোমাদেরকে দান করেছেন গবাদি পশু ও সন্তান-সন্তুতি।
আর উদ্যানরাজি ও ঝর্ণাসমূহ।
আমি তোমাদের জন্য মহা দিবসের শাস্তির ভয় করছি।’
তারা বলল- ‘তুমি নসীহত কর আর না কর, আমাদের জন্য দু’ই সমান।
এসব (কথাবার্তা বলা) পূর্ববর্তী লোকেদের অভ্যাস ছাড়া আর অন্য কিছুই না।
আমাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না।’
অতঃপর তারা তাকে মিথ্যে ব’লে প্রত্যাখ্যান করল। তখন আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।
এবং তোমার প্রতিপালক, তিনি মহা প্রতাপশালী, বড়ই দয়ালু।
সামূদ জাতি রসূলগণকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
যখন তাদের ভাই সালিহ তাদেরকে বলেছিল- তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না?
আমি তোমাদের জন্য (প্রেরিত) বিশ্বস্ত রসূল।
কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমাকে মান্য কর।
আর এজন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, আমার প্রতিদান তো আছে একমাত্র বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট।
তোমাদেরকে কি এখানে যে সব (ভোগ বিলাস) আছে তাতেই নিরাপদে রেখে দেয়া হবে?
উদ্যানরাজি আর ঝার্ণাসমূহে।
আর শষ্যক্ষেতে ও ফুলে আচ্ছাদিত (ফলে ভারাক্রান্ত) খেজুর বাগানে?
এবং তোমরা দক্ষতার সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছ।
কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমাকে মান্য কর।
এবং সীমালঙ্ঘনকারীদের নির্দেশ মান্য কর না।
যারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, সংস্কার করে না।’
তারা বলল- ‘তুমি তো কেবল যাদুগ্রস্তদের একজন।
তুমি আমাদের মত মানুষ ছাড়া আর কিছুই না। কাজেই তুমি সত্যবাদী হলে একটা নিদর্শন হাজির কর।
সালিহ বলল- ‘এই একটি উটনি, এর জন্য আছে পানি পানের পালা আর তোমাদের জন্য আছে পানি পানের পালা নির্ধারিত দিনে।
অনিষ্ট সাধনের নিমিত্তে তাকে স্পর্শ কর না, তাহলে তোমাদেরকে মহা দিবসের আযাব পাকড়াও করবে।
কিন্তু তারা তাকে বধ করল, ফলে তারা অনুতপ্ত হল।
অতঃপর আযাব তাদেরকে পাকড়াও করল। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।
আর তোমার প্রতিপালক তিনি তো মহা পরাক্রমশালী, বড়ই দয়ালু।
লূতের সম্প্রদায় রসুলদেরকে মিথ্যে বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বলেছিল- ‘তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না?
আমি তো তোমাদের জন্য (প্রেরিত) একজন বিশ্বস্ত রসূল।
কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমাকে মান্য কর।
আমি এজন্য তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, আমার প্রতিদান একমাত্র জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে।
জগতের সকল প্রাণীর মধ্যে তোমরাই কি পুরুষদের সঙ্গে উপগত হও,
এবং তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যে স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে ত্যাগ কর? রবং তোমরা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’
তারা বলল- ‘হে লূত! তুমি যদি বিরত না হও তবে তুমি অবশ্য অবশ্যই বহিস্কৃত হবে।’
লূত বলল- ‘আমি তোমাদের এ কাজকে ঘৃণা করি।
হে আমার প্রতিপালক! তারা যা করে তা থেকে তুমি আমাকে ও আমার পরিবারবর্গকে রক্ষা কর।’
অতঃপর আমি তাকে ও তার পরিবারবর্গের সকলকে রক্ষা করলাম
এক বৃদ্ধা ছাড়া। সে ছিল পেছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
অতঃপর অন্যদের সকলকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিলাম।
তাদের উপর বর্ষণ করলাম (শাস্তির) বৃষ্টি, ভয় প্রদর্শিতদের জন্য এ বৃষ্টি ছিল কতই না মন্দ!
নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।
তোমার প্রতিপালক, তিনি মহা প্রতাপশালী, বড়ই দয়ালু।
বনের অধিবাসীরা রসূলদেরকে মিথ্যে বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
যখন শু‘আয়ব তাদেরকে বলেছিল- ‘তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না?
আমি তোমাদের জন্য (প্রেরিত) বিশ্বস্ত রাসুল।
কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে মান্য কর।
এ জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, আমার প্রতিদান তো রয়েছে একমাত্র জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট।
মাপে পূর্ণ মাত্রায় দাও আর যারা মাপে কম দেয় তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে।
মানুষকে তাদের প্রাপ্যবস্তু কম দিবে না। আর পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না।
এবং ভয় কর তাঁকে যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তী বংশাবলীকে সৃষ্টি করেছেন।’
তারা বলল- ‘তুমি তো কেবল যাদুগ্রস্তদের একজন।
তুমি আমাদের মতই মানুষ বৈ নও, আমরা মনে করি তুমি অবশ্য মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।
তুমি সত্যবাদী হলে আকাশের এক টুকরো আমাদের উপর ফেলে দাও।’
শু‘আয়ব বলল- ‘তোমরা যা কর, আমার প্রতিপালক সে সম্পর্কে বেশি অবগত।’
কিন্তু তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করল। ফলে তাদেরকে এক মেঘাচ্ছন্ন দিবসের শাস্তি পাকড়াও করল। তা ছিল এক মহা দিবসের ‘আযাব।
এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।
আর তোমার প্রতিপালক, তিনি অবশ্যই মহা প্রতাপশালী, বড়ই দয়ালু।
অবশ্যই এ কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।
বিশ্বস্ত আত্মা (জিবরাঈল) একে নিয়ে অবতরণ করেছে
তোমার অন্তরে যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।
সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।
পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেও নিশ্চয় এর উল্লেখ আছে।
এটা কি তাদের জন্য নিদর্শন নয় যে, বানী ইসরাঈলের পন্ডিতগণ তা জানত (যে তা সত্য)।
আমি যদি তা কোন অনারবের প্রতি অবতীর্ণ করতাম,
অতঃপর সে তা তাদের নিকট পাঠ করত, তাহলে তারা তাতে বিশ্বাস আনত না।
এভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে অবিশ্বাস সঞ্চার করেছি।
তারা এর প্রতি ঈমান আনবে না যতক্ষণ না তারা ভয়াবহ শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।
কাজেই তা তাদের কাছে হঠাৎ এসে পড়বে, তারা কিছুই বুঝতে পারবে না।
তারা তখন বলবে- ‘আমাদেরকে কি অবকাশ দেয়া হবে?’
তারা কি আমার শাস্তি দ্রুত কামনা করে?
তুমি কি ভেবে দেখেছ আমি যদি তাদেরকে কতক বছর ভোগ বিলাস করতে দেই,
অতঃপর তাদেরকে যে বিষয়ের ও‘য়াদা দেয়া হত তা তাদের কাছে এসে পড়ে।
তখন তাদের বিলাসের সামগ্রী তাদের কোন উপকারে আসবে না।
আমি এমন কোন জনপদ ধ্বংস করিনি যার জন্য কোন ভয় প্রদর্শনকারী ছিল না
স্মরণ করানোর জন্য। আমি কখনো অন্যায়কারী নই।
শয়ত্বানরা তা (অর্থাৎ কুরআন) নিয়ে অবতরণ করেনি।
তারা এ কাজের যোগ্য নয় আর তারা এর সামর্থ্যও রাখে না।
তাদেরকে এটা শোনা থেকে অবশ্যই দূরে রাখা হয়েছে।
কাজেই তুমি অন্য কোন ইলাহ্কে আল্লাহর সঙ্গে ডেক না। ডাকলে তুমি শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
আর তুমি সতর্ক কর তোমার নিকটাত্মীয় স্বজনদের
যে সকল বিশ্বাসীরা তোমার আনুগত্য করে তাদের জন্য তুমি তোমার অনুকম্পার বাহু প্রসারিত কর।
তারা যদি তোমার অবাধ্যতা করে তাহলে তুমি বলে দাও- তোমরা যা কর তার সঙ্গে আমি সম্পর্কহীন।
আর তুমি প্রবল পরাক্রান্ত পরম দয়ালুর উপর নির্ভর কর;
যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাযের জন্য) দন্ডায়মান হও।
আর (তিনি দেখেন) সাজদাকারীদের সঙ্গে তোমার চলাফিরা।
তিনি সব কিছু শোনেন, সব কিছু জানেন।
আমি কি তোমাদেরকে জানাব কাদের নিকট শয়ত্বানরা অবতীর্ণ হয়।
তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি চরম মিথ্যুক ও পাপীর নিকট।
ওরা কান পেতে থাকে আর তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।
বিভ্রান্তরাই কবিদের অনুসরণ করে,
তুমি কি দেখ না যে, তারা প্রতি ময়দানেই উদভ্রান্ত হয়ে ফিরে?
আর তারা যা বলে তা তারা নিজেরা করে না।
কিন্তু ওরা ব্যতীত যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আর আল্লাহকে খুব বেশি স্মরণ করে আর নির্যাতিত হওয়ার পর নিজেদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করে। যালিমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কোন্ (মহা সংকটময়) জায়গায় তারা ফিরে যাচ্ছে।