অল ইসলাম লাইব্রেরি
1

হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, কিয়ামাতের কম্পন এক ভয়ানক জিনিস।

2

সেদিন তুমি দেখবে প্রতিটি দুগ্ধদায়িনী ভুলে যাবে তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে, আর প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে, আর মানুষকে দেখবে মাতাল, যদিও তারা প্রকৃতপক্ষে মাতাল নয়, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি বড়ই কঠিন (যার কারণে তাদের ঐ অবস্থা ঘটবে)।

3

কতক মানুষ জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহ সম্বন্ধে বাদানুবাদ করে, আর প্রত্যেক অবাধ্য শয়ত্বানের অনুসরণ করে।

4

যার (অর্থাৎ শয়ত্বানের) সম্পর্কে বিধান করা হয়েছে যে, যে কেউ তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়বে, সে তাকে বিপথগামী করবে, আর তাকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি শাস্তির দিকে পরিচালিত করবে।

5

হে মানুষ! পুনরুত্থানের ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দিহান হও, তাহলে (চিন্তা করে দেখ) আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে, অতঃপর শুক্র হতে, অতঃপর জমাট রক্ত থেকে, অতঃপর মাংসপিন্ড হতে পূর্ণ আকৃতিবিশিষ্ট বা অপূর্ণ আকৃতিবিশিষ্ট অবস্থায় (আমার শক্তি-ক্ষমতা) তোমাদের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্য। আর আমি যাকে ইচ্ছে করি তাকে একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত মাতৃগর্ভে রাখি, অতঃপর তোমাদেরকে বের করে আনি শিশুরূপে, অতঃপর (লালন পালন) করি যাতে তোমরা তোমাদের পূর্ণ শক্তির বয়সে পৌঁছতে পার। তোমাদের কারো কারো মৃত্যু ঘটাই, আর কতককে ফিরিয়ে দেয়া হয় নিস্ক্রিয় বার্ধক্যে যাতে (অনেক) জ্ঞান লাভের পরেও তাদের আর কোন জ্ঞান থাকে না। অতঃপর (আরো) তোমরা ভূমিকে দেখ শুষ্ক, মৃত; অতঃপর আমি যখন তাতে পানি বর্ষণ করি তখন তাতে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়, তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয়, আর তা উদগত করে সকল প্রকার নয়নজুড়ানো উদ্ভিদ (জোড়ায় জোড়ায়)।

6

এ রকম হয় এজন্য যে, আল্লাহ হলেন সত্য সঠিক, আর তিনিই মৃতকে জীবিত করেন, আর তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।

7

আর কিয়ামাত অবশ্যই আসবে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং যারা কবরে আছে আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই পুনরুত্থিত করবেন।

8

তবুও মানুষের মধ্যে এমন আছে যারা জ্ঞান, পথের দিশা ও কোন আলোকপ্রদানকারী কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে।

9

(বিতর্ক করে অবজ্ঞাভরে) ঘাড় বাঁকিয়ে (লোকেদেরকে) আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে। তার জন্য আছে লাঞ্ছনা এ দুনিয়াতে, আর কিয়ামাতের দিন তাকে আস্বাদন করাব (অগ্নির) দহন যন্ত্রণা।

10

(বলা হবে) তোমার হাত দু’খানা আগেই যা পাঠিয়েছিল এটা তারই ফল, কারণ আল্লাহ তো তাঁর বান্দাহদের প্রতি যালিম নন।

11

মানুষের মধ্যে এমন কতক আছে যারা শেষ সীমায় অবস্থান করে আল্লাহর ‘ইবাদাত করে। অতঃপর তার কল্যাণ হলে, তা নিয়ে সে তৃপ্ত থাকে, আর কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হলে সে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে দুনিয়াতেও আর আখিরাতেও- এটাই হল স্পষ্ট ক্ষতি।

12

আল্লাহকে বাদ দিয়ে সে এমন কিছুকে ডাকে যা না পারে তার কোন ক্ষতি করতে আর না পারে কোন উপকার করতে, এটাই হল চরম আকারের গুমরাহী।

13

সে এমন কিছুকে ডাকে যার লাভের চেয়ে ক্ষতিই নিকটবর্তী, কত মন্দই না এই অভিভাবক, আর কত মন্দই না এই সঙ্গী!

14

যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, আল্লাহ যা করতে চান, তাই করেন।

15

যে কেউ ধারণা করে যে আল্লাহ তাকে (অর্থাৎ তাঁর রসূলকে) কক্ষনো দুনিয়া ও আখিরাতে সাহায্য করবেন না, তাহলে সে আকাশ পর্যন্ত একটা দড়ি ঝুলিয়ে নিক, অতঃপর তা কেটে দিক, অতঃপর সে দেখুক তার কলা-কৌশল তার রাগের কারণ দূর করে কিনা। (রসূলের দুশমন নিজের ঝুলানো দড়িটাই কাটুক, কেননা সে তো রসূলের প্রতি আল্লাহর সাহায্যের দড়িটা কক্ষনো কাটতে পারবে না।)

16

এভাবেই আমি স্পষ্ট নিদর্শনরূপে কুরআন অবতীর্ণ করেছি আর আল্লাহ যাকে চান সঠিক পথে পরিচালিত করেন।

17

যারা ঈমান এনেছে আর যারা ইয়াহূদী হয়েছে, আর যারা সাবিয়ী, নাসারা, অগ্নিপূজক ও মুশরিক, আল্লাহ কিয়ামাতের দিন এদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন (যে কারা সঠিক পথে আছে), কারণ আল্লাহ সব কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী।

18

তুমি কি দেখ না যে আল্লাহকে সেজদা করে যারা আকাশে আছে, আর যারা পৃথিবীতে আছে আর সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পর্বতসমূহ, বৃক্ষরাজি, জীবজন্তু এবং মানুষের মধ্যে অনেকে? আর অনেকের প্রতি শাস্তি সাব্যস্ত হয়ে গেছে। আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করতে চান, তাকে সম্মানিত করার কেউ নেই। আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তাই করেন।[সাজদাহ]

19

এরা বিবাদের দু’টি পক্ষ, (মু’মিনরা একটি পক্ষ, আর সমস্ত কাফিররা আরেকটি পক্ষ) এরা এদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বাদানুবাদ করে, অতঃপর যারা (তাদের প্রতিপালককে) অস্বীকার করে, তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আগুনের পোশাক, তাদের মাথার উপর ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি।

20

যা দিয়ে তাদের পেটে যা আছে তা ও তাদের চামড়া গলিয়ে দেয়া হবে।

21

উপরন্তু তাদের (শাস্তির) জন্য থাকবে লোহার মুগুর।

22

যখনই তারা যন্ত্রণার চোটে তাত্থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে (তখনই) তাদেরকে তার ভিতরে ফিরিয়ে দেয়া হবে, (আর বলা হবে, আগুনে) পুড়ার শাস্তি আস্বাদন কর।

23

যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে, আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন আর মুক্তা দিয়ে আর সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের।

24

তাদেরকে (দুনিয়ার জীবনে) পথ দেখানো হয়েছিল পবিত্র বাক্যের (অর্থাৎ কালিমা তাইয়্যেবা বা আল-কুরআনের) দিকে আর তারা পরিচালিত হয়েছিল তাঁর পথে যিনি সকল প্রশংসার দাবীদার।

25

যারা কুফুরী করে আর আল্লাহর পথে (মানুষের চলার ক্ষেত্রে) বাধা সৃষ্টি করে আর মাসজিদে হারামে যেতেও- যাকে আমি করেছি স্থানীয় বাসিন্দা ও অন্যদেশবাসী সকলের জন্য সমান। যে তাতে অন্যায়ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছে করে তাকে আমি আস্বাদন করাব ভয়াবহ শাস্তি।

26

স্মরণ কর যখন আমি ইবরাহীমকে (পবিত্র) গৃহের স্থান চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম, (তখন বলেছিলাম) আমার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার গণ্য করবে না, আর আমার গৃহকে পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারী, নামাযে কিয়ামকারী, রূকু‘কারী ও সেজদাকারীদের জন্য।

27

আর মানুষের মাঝে হাজ্জের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে, আর সব (পথক্লান্ত) শীর্ণ উটের পিঠে, বহু দূরের গভীর পর্বত সংকুল পথ বেয়ে

28

যাতে তারা তাদের জন্য (এখানে রাখা দুনিয়া ও আখিরাতের) কল্যাণগুলো প্রত্যক্ষ করতে পারে আর তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিযক দান করেছেন, নির্দিষ্ট দিনগুলোতে তার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। কাজেই তোমরা (নিজেরা) তাত্থেকে খাও আর দুঃস্থ অভাবীদের খাওয়াও।

29

অতঃপর তারা যেন তাদের দৈহিক অপরিচ্ছন্নতা দূর করে, তাদের মানৎ পূর্ণ করে আর প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করে।

30

এটাই (হাজ্জ), যে কেউ আল্লাহর নির্ধারিত অনুষ্ঠানগুলোর সম্মান করবে, সেটা তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্য উত্তম। চতুষ্পদ জন্তুগুলো তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সেগুলো ছাড়া যেগুলোর ব্যাপারে তোমাদেরকে পড়ে শুনানো হয়েছে। কাজেই তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা বর্জন কর আর মিথ্যে কথা পরিহার কর

31

আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর সাথে শরীক না করে। যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করে সে যেন আকাশ থেকে পড়ে গেল, আর পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিংবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী স্থানে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

32

এই (তার অবস্থা), আর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে সম্মান করবে সে তো তার অন্তরস্থিত আল্লাহ-ভীতি থেকেই তা করবে।

33

এতে (অর্থাৎ কুরবানীর পশুতে) তোমাদের জন্য নানান উপকার রয়েছে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত (কুরবানীর জায়গায় পৌঁছা পর্যন্ত তোমরা এই জন্তুগুলোর দ্বারা উপকৃত হতে পার), সর্বশেষে এগুলোর কুরবানীর স্থান হচ্ছে প্রাচীন ঘরের নিকট।

34

আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য (কুরবানীর) নিয়ম করে দিয়েছি। তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিযক্ দেয়া হয়েছে সেগুলোর উপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, (এই বিভিন্ন নিয়ম-পদ্ধতির মূল লক্ষ্য কিন্তু এক- আল্লাহর নির্দেশ পালন), কারণ তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য, কাজেই তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ কর আর সুসংবাদ দাও সেই বিনীতদেরকে-

35

‘আল্লাহ’ নামের উল্লেখ হলেই যাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে, যারা তাদের বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে, নামায কায়িম করে, আর তাদেরকে আমি যে রিযক্ দিয়েছি তাত্থেকে তারা ব্যয় করে।

36

আর (কুরবানীর) উটগুলোকে আমি করেছি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। তাতে তোমাদের জন্য কল্যাণ আছে, কাজেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় ওগুলোর উপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। যখন তা পার্শ্বভরে পড়ে যায়, তখন তাথেকে খাও আর যারা (ভিক্ষে না ক’রে) পরিতৃপ্ত থাকে তাদেরকে আর যারা কাকুতি মিনতি ক’রে যাচ্ঞা করে তাদেরকেও খাওয়াও। এভাবে আমি ওগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

37

আল্লাহর কাছে ওগুলোর না গোশত পৌঁছে, আর না রক্ত পৌঁছে বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি ওগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পার এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, কাজেই সৎকর্মশীলদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও।

38

আল্লাহ মু’মিনদেরকে রক্ষা করেন (যাবতীয় মন্দ হতে)। আল্লাহ কোন খিয়ানাতকারী, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।

39

যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয় তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল, কেননা তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।

40

তাদেরকে অন্যায়ভাবে গৃহ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধু তাদের এ কথা বলার কারণে যে, ‘আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক।’ আল্লাহ যদি মানুষদের এক দলের দ্বারা অন্য দলকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রীষ্টান সংসারত্যাগীদের উপাসনালয়, গির্জা ও ইয়াহূদীদের উপাসনার স্থান আর মাসজিদসমূহ যেখানে আল্লাহর নাম অধিকহারে স্মরণ করা হয়। আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে, আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রান্ত।

41

(এরা হল) যাদেরকে আমি যমীনে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে, সৎ কাজের আদেশ দেয় ও মন্দ কাজে নিষেধ করে, সকল কাজের শেষ পরিণাম (ও সিদ্ধান্ত) আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ।

42

লোকেরা যদি তোমাকে অস্বীকার করে তাহলে (জেনে রেখ এটা কোন নতুন ব্যাপার নয়) তাদের পূর্বে নূহ, ‘আদ ও সামূদ সম্প্রদায়ও (তাদের রসূলদের) অস্বীকার করেছিল।

43

আর ইবরাহীমের সম্প্রদায় ও লূতের সম্প্রদায়ও (অস্বীকার করেছিল)।

44

আর মাদইয়ানবাসীরাও [অস্বীকার করেছিল যারা ছিল শু‘আয়ব (আঃ)-এর সম্প্রদায়], আর মূসাকেও অস্বীকার করা হয়েছিল। আমি অস্বীকারকারীদেরকে সময়- সুযোগ দিয়েছিলাম, অতঃপর তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম। কত ভীষণ ছিল আমাকে অস্বীকার করার পরিণতি!

45

আমি কত জনবসতিকে ধ্বংস করেছি যেগুলোর অধিবাসীরা ছিল যালিম, সেগুলো ছাদের ভরে পতিত হয়ে বিধ্বস্ত হয়েছিল, বিরাণ হয়েছিল কত কূপ আর সুউচ্চ সুদৃঢ় প্রাসাদরাজি।

46

তারা কি যমীনে ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারত, আর তাদের কান শুনতে পারত। প্রকৃতপক্ষে চোখ অন্ধ নয়, বরং বুকের ভিতর যে হৃদয় আছে তা-ই অন্ধ।

47

তারা তোমাকে তাড়াতাড়ি শাস্তি নিয়ে আসতে বলে (কিন্তু শাস্তি তো আসবে আল্লাহর ও‘য়াদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে), কেননা আল্লাহ কক্ষনো তাঁর ওয়া‘দা খেলাফ করেন না, তোমার প্রতিপালকের একদিন হল তোমাদের গণনায় এক হাজার বছরের সমান।

48

আমি কত জনপদকে সময়-সুযোগ দিয়েছি যখন তারা ছিল অন্যায় কাজে লিপ্ত। অতঃপর সেগুলোকে পাকড়াও করেছিলাম, (পালিয়ে কেউ তো কোথাও যেতে পারবে না) কেননা (সকলের) প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে।

49

বল, ‘হে মানুষ! আমি (প্রেরিত হয়েছি) তোমাদের জন্য এক সুস্পষ্ট সতর্ককারীরূপে।’

50

কাজেই যারা ঈমান আনবে আর সৎ কাজ করবে তাদের জন্য কেবল আছে ক্ষমা আর সম্মানজনক জীবিকা।

51

আর যারা আমার নিদর্শনের বিরুদ্ধে চেষ্টা চালায়, সেগুলোর উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করার জন্য, তারাই হল জাহান্নামের বাসিন্দা।

52

আমি তোমার পূর্বে যে সব রসূল কিংবা নবী পাঠিয়েছি তাদের কেউ যখনই কোন আকাঙ্ক্ষা করেছে তখনই শয়ত্বান তার আকাঙ্ক্ষায় (প্রতিবন্ধকতা, সন্দেহ-সংশয়) নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু শয়ত্বান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ তা মুছে দেন, অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। কারণ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রেষ্ঠ হিকমতওয়ালা।

53

(তিনি এটা হতে দেন এজন্য) যাতে তিনি শয়ত্বান যা মিশিয়ে দিয়েছে তা দ্বারা পরীক্ষা করতে পারেন তাদেরকে যাদের অন্তরে (মুনাফিকীর) ব্যাধি আছে, যারা শক্ত হৃদয়ের। অন্যায়কারীরা চরম মতভেদে লিপ্ত আছে।

54

(আর অপরদিকে) যাতে, যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জানতে পারে যে, এটা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে (প্রেরিত) সত্য, অতঃপর তারা যেন তাতে বিশ্বাসী হয় আর তাদের অন্তর নম্রতাভরে তার প্রতি খুলে দেয়া হয়, কারণ আল্লাহ ঈমানদারদেরকে অবশ্যই সঠিক পথে পরিচালিত করেন।

55

অবিশ্বাসীরা তাতে (অর্থাৎ ওয়াহীতে) সন্দেহ পোষণ করা থেকে বিরত হবে না যতক্ষণ না কিয়ামাত আসবে হঠাৎ ক’রে অথবা তাদের উপর শাস্তি এসে যাবে এক বন্ধ্যা দিনে (যা কাফিরদেরকে কোন সুফল দিবে না)।

56

ক্ষমতা-আধিপত্য সেদিন হবে আল্লাহরই, তিনি তাদের মাঝে বিচার-ফয়সালা করবেন। অতঃপর যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তারা থাকবে নি‘মাতরাজিতে পরিপূর্ণ জান্নাতে।

57

আর যারা কুফুরী করে আর আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যে জেনে প্রত্যাখ্যান করে তাদের জন্য আছে অপমানজনক শাস্তি।

58

আর যারা আল্লাহর পথে হিজরাত করেছে, অতঃপর নিহত হয়েছে, কিংবা মারা গেছে, আল্লাহ তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই উৎকৃষ্ট রিযক্ দান করবেন, আর আল্লাহ- তিনি তো সর্বোত্তম রিযকদাতা।

59

তিনি তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই দাখিল করবেন এমন জায়গায় যা পেয়ে তারা খুবই সন্তুষ্ট হবে, আর আল্লাহ নিশ্চিতই অবশ্যই সর্বজ্ঞ, পরম সহিষ্ণু।

60

এতো হল তাদের অবস্থা, আর যে ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হলে সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করে, অতঃপর আবার সে নিপীড়িত হয়, আল্লাহ তাকে অবশ্য অবশ্যই সাহায্য করবেন, আল্লাহ অবশ্যই মাফকারী ক্ষমাশীল।

61

এটা এজন্য যে, আল্লাহ রাতকে ঢুকিয়ে দেন দিনে, আর দিনকে ঢুকিয়ে দেন রাতে (দুঃখ বেদনার অন্ধকার দূর করে আনন্দের আলো এনে দেন আর আনন্দিত জনকে দুঃখের অাঁধারে ডুবিয়ে দেন)। আর আল্লাহ তো সব কিছু শোনেন, সব কিছু দেখেন।

62

এজন্য যে, আল্লাহ- তিনিই সত্য, আর তাঁকে বাদ দিয়ে তারা অন্য যাকে ডাকে তা অলীক, অসত্য, আর আল্লাহ, তিনি তো সর্বোচ্চ, সুমহান।

63

তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, যার ফলে পৃথিবী সবুজে আচ্ছাদিত হয়ে যায়, নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্ণদর্শী, সর্ববিষয়ে ওয়াকিফহাল।

64

আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর, আর আল্লাহ, তিনি যাবতীয় অভাব থেকে মুক্ত, যাবতীয় প্রশংসার অধিকারী।

65

তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব তিনি তোমাদের কল্যাণ-কাজে লাগিয়ে রেখেছেন। আর নৌযানগুলো সমুদ্রে চলাচল করে তাঁর হুকুমেই? তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন যাতে তা পৃথিবীতে পতিত না হয় তাঁর অনুমতি ছাড়া। আল্লাহ মানুষের প্রতি নিশ্চিতই বড়ই করুণাশীল, বড়ই দয়াবান।

66

তিনিই তোমাদেরকে জীবন দিয়েছেন, অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর আবার তোমাদেরকে জীবন দিবেন। মানুষ সত্যিই বড়ই অকৃতজ্ঞ।

67

প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আমি (‘ইবাদাতের) নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি যা তারা অনুসরণ করে। কাজেই তারা যেন এ বিষয়ে তোমার সঙ্গে তর্ক বিতর্ক না করে। তুমি (তাদেরকে) তোমার প্রতিপালকের দিকে ডাক, তুমি অবশ্যই সরল সঠিক পথে আছ।

68

তারা যদি তোমার সঙ্গে বিতর্ক করে তাহলে বল- তোমরা যা কর আল্লাহ তা ভাল করেই জানেন।

69

আল্লাহ কিয়ামাতের দিন সে বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবেন যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছ।

70

তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা আছে আকাশে আর পৃথিবীতে, এ সবই লিপিতে (রেকর্ডে) আছে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।

71

আর তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুকে ডাকে যার সমর্থনে তিনি কোন দলীল পাঠাননি আর যে সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই। (এসব) যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।

72

আর তাদের সম্মুখে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত তিলাওয়াত করা হয় তখন তুমি কাফিরদের চেহারায় একটা অনীহার ভাব দেখতে পাবে। তাদের কাছে যারা আমার আয়াত তিলাওয়াত করে তাদেরকে তারা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। বল, তাহলে আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও খারাপ কিছুর সংবাদ দেব? তা হল আগুন। আল্লাহ কাফিরদেরকে এর ওয়া‘দা দিয়েছেন। আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল!

73

হে মানুষ! একটা দৃষ্টান্ত পেশ করা হচ্ছে, সেটা মনোযোগ দিয়ে শোন। আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক তারা কক্ষনো একটা মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না, এজন্য তারা সবাই একত্রিত হলেও। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তারা তার থেকে তা উদ্ধারও করতে পারে না, প্রার্থনাকারী আর যার কাছে প্রার্থনা করা হয় উভয়েই দুর্বল।

74

তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় না, আল্লাহ নিশ্চিতই ক্ষমতাশালী, মহা পরাক্রান্ত।

75

আল্লাহ ফেরেশতাগণের মধ্য হতে বাণীবাহক মনোনীত করেন আর মানুষদের মধ্য হতেও, আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সব কিছু দেখেন।

76

তিনি জানেন তাদের সামনে যা আছে আর তাদের পেছনে যা আছে, আর সমস্ত ব্যাপার (চূড়ান্ত ফয়সালার জন্য) আল্লাহর কাছে ফিরে যায়।

77

হে মু’মিনগণ! তোমরা রুকূ‘ কর, সেজদা কর আর তোমাদের প্রতিপালকের ‘ইবাদাত কর ও সৎকাজ কর যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার। [সাজদাহ]

78

আর আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে বেছে নিয়েছেন। দ্বীনের ভিতর তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা চাপিয়ে দেননি। এটাই তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দ্বীন, আল্লাহ তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বেও, আর এ কিতাবেও (ঐ নামই দেয়া হয়েছে) যাতে রসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা সাক্ষী হও মানব জাতির জন্য। কাজেই তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত দাও আর আল্লাহকে আঁকড়ে ধর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। কতই না উত্তম অভিভাবক আর কতই না উত্তম সাহায্যকারী!